ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে টানা বিক্ষোভ ও অবরোধ চলছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোর থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-জনতার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। শাহবাগ মোড়জুড়ে স্লোগান, মিছিল আর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহবাগ মোড়ে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। একদল আন্দোলনকারী এক পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন, অন্য অংশে চলছে মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ।
এই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি হয় আগের রাতে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। উপাচার্য চত্বর ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন কয়েক শ শিক্ষার্থী। ডাকসুর নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমসহ জাতীয় ছাত্রশক্তির নেতারাও বিক্ষোভে অংশ নেন। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ একটি দল দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ভবনে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
শাহবাগে উপস্থিত আন্দোলনকারীরা একের পর এক স্লোগানে মুখর করে তোলেন এলাকা। ‘এই মুহূর্তে দরকার, বিপ্লবী সরকার’, ‘এক দুই তিন চার, ইন্টেরিম গদি ছাড়’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘গোলামি না আজাদী, আজাদী আজাদী’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’ স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ।
রাজধানীর শান্তিনগর থেকে আন্দোলনে যোগ দেওয়া শরিফুল হাসান বলেন, “এক মাস আগেও এই শাহবাগেই হাদি ভাইয়ের ডাকে আন্দোলন করেছি। আজ হাদি ভাই নেই। তার হত্যার বিচার চাইতে আবার এখানে দাঁড়াতে হচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের কিছু হতে পারে না।”
শনিরআখড়া থেকে আসা মাদ্রাসাশিক্ষার্থী আশফাকুর রহমান বলেন, “আমরা একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিককে হারিয়েছি। রাতে ঘুমাতে পারিনি। সকালে প্রতিবাদ জানাতে ছুটে এসেছি।” রামপুরা থেকে আসা ইমরুল কায়েসের কণ্ঠেও ছিল ক্ষোভ, “হাদি ভাইয়ের মৃত্যু পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।”
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর ঘটনাটি দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। গত বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগকালে চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে গুরুতর আহত হন তিনি। গুলিটি তার মাথায় লাগে। প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শাহবাগে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। পরিস্থিতি ঘিরে পুরো শাহবাগ এলাকা এখনো থমথমে ও উত্তপ্ত।