চব্বিশের জুলাই–আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থান চলাকালীন কারফিউ জারি করে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের এজলাসে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আবেদন জানান। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়, ওই সময়ে সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের মধ্যে একাধিক ফোনালাপ হয়েছে। ওই ফোনালাপের এক পর্যায়ে তারা বলেন, কারফিউ চলাকালে আন্দোলনকারীদের ‘শেষ করে দিতে হবে’। প্রসিকিউশনের দাবি, এই নির্দেশনা দেশব্যাপী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যা করার উসকানি হিসেবে কাজ করেছে।
শুনানির সময় আসামিদের নিজেদের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো হয়। অডিওতে দেখা যায়, আনিসুল হক আন্দোলন দমনের পরিকল্পনা নিয়ে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং বারবার কারফিউ জারির কথাও উঠেছে। অডিও শোনার সময় সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হককে হাসিমুখে এবং নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় দেখা যায়।
চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম বলেন, “আজ আমরা এই দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার আবেদন করেছি। আদালত বিষয়টি গ্রহণ করেছেন এবং আগামী ৪ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।”
আসামিদের পক্ষে শুনানিতে সিনিয়র আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালে বিচারিক প্যানেলের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত ৪ ডিসেম্বর প্রসিকিউশন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। এরপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগটি আমলে নেয়। অভিযোগ গঠনের এই শুনানি দুই আসামির বিরুদ্ধে বিচারের প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়ে গেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ আগস্ট গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা উভয়েই জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান দমন এবং ছাত্র-জনতার হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।