চাঁদপুর মেঘনা নদীর নৌ সীমানায় ঘনকুয়াশায় নির্বাহী দুটি লঞ্চের সংঘর্ষে অন্তত ৪ যাত্রী নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাত আনুমানিক দুইটার দিকে মেঘনা নদীর চাঁদপুরের হাইমচর সীমন্তবর্তী নীলকমল বাংলা বাজার এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি জাকির সম্রাট-৩ ও বরিশালগামী অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের এই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে জাকির সম্রাট লঞ্চের অনেকাংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।অল্পের জন্য ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পায় বলে লঞ্চটির ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান।
এদিকে, দুর্ঘটনার পর আহত নিহত যাত্রীসহ অন্যান্য যাত্রীদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লঞ্চটি চাঁদপুর না ভিড়িয়ে সরাসরি ঢাকা চলে যায়।সকালে নিহতদের মরদেহ লঞ্চ থেকে নামিয়ে নৌ পুলিশ ঢাকা মিডফোর্ড হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিএ সদরঘাট কর্মকর্তা বাছির আলী জানিয়েছেন। এই ঘটনায় অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চের চারজন স্টাফকে আটক করেছে নৌ পুলিশ। নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জানান,অ্যাডভেঞ্চার লঞ্চটি ঝালকাঠি ঘাটে জব্দ করা হয়েছে।
ঘটনায় এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের যাত্রীদের মধ্যে নিহতরা হলেন- যথাক্রমে আ. গনি (৩৮)পিতা সিরাজুল বেপারী, মো. সাজু (৪৫) পিতা মো. কালু খা, সাং কাজিরাবাদ থানা,লালমোহন, জেলা, ভোলা মো. হানিফ (৬০) পিতা আমির হোসেন, সাং আহমেদপুর থানা,চরফ্যাশন, জেলা, ভোলা ও রিনা বেগম (৩৫) পিতা মৃত মোক্তার হোসেন, স্বামী মিলন সাং কচুখালি, গজারিয়া থানা, লালমোহন, জেলা ভোলা।
হাসপাতালে ভর্তি আহত ০৩ জন যথাক্রমে মো. শাহাদত পিতা মাতলাব বেপারী সাং কাজিরাবাদ চার নম্বর ওয়ার্ড থানা লালমোহন, ভোলা, মোহাম্মদ মিনা (৪৫) পিতা আব্দুল আজিজ সাং কচুখালী ১ নং ওয়ার্ড থানা লালমোহন, জেলা ভোলা ও মোসা. রহিমা (৪৫) স্বামী মো. হানিফ সাং আহমদপুর, থানা চরফ্যাশন জেলা ভোলা। ঢাকা নৌ পুলিশের বরাত দিয়ে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের এক প্রেসনোটে এ তথ্য জানিয়ে তাতে আরো বলা হয়, এডভেঞ্জার ৯ ঢাকা থেকে সম্মেলন এর যাত্রী নিয়ে বরিশাল, ঝালকাঠি এর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে জাকির সম্রাট ৩ লঞ্চ ভোলা থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকা আসার পথে ইং ২৫/১২/২৫ দিবাগত রাত অনুমান ০১.৩৮ টার সময় চাঁদপুর হাইমচর এলাকায় মুখামুখি সংঘর্ষ ঘটেছে।
অ্যাডভেঞ্চার ৯ লঞ্চের আটকৃত চারজন স্টাফরা হলেন- (ঝালকাঠি থানায় আছে) মো. মিন্টু (২৮), পিতা- আ: কুদ্দুস মাঝি, সাং- কয়য়ারচর, থানা- নলছিটি, ঝালকাঠি, মো. সোহেল (৪০), পিতা- খলিলুর রহমান গাজী, সাং- বাহের গজালিয়া, থানা-গলাচিপা, জেলা- পটুয়াখালী, মহিন হাওলাদার (২৫), পিতা- সামছুল হক হাওলাদার, সাং-ভরতকাঠি, থানা-নলছিটি, ঝালকাঠি ও মো. মনিরুজ্জামান(৪০), পিতা- সিদ্দিকুর রহমান, সাং- দ: রুপসী, থানা- রুপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ।
শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম ইকবাল ও সদর ঘাট নৌ থানার ইনচার্জ সোহাগ রানা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
চাঁদপুর বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, চাঁদপুরের হাইমচর মেঘনা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে দুটি লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ২জন নিহতসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
তবে অ্যাডভেঞ্চার-৯ সকালে বরিশাল থেকে ঝালকাঠি গেলে ঝালকাঠিতে জব্দ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঝালকাঠির সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বায়জিদ ইবনে আকবর।
লঞ্চে থাকা যাত্রীরা জানায়, ভোলার ঘোষেরহাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকা অভিমুখী এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চটি রাত ২টার আগে হাইমচর নৌ এলাকা অতিক্রম করছিল। ওই সময়ে ঢাকা থেকে বিএনপির সম্মেলনের যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলো বরিশালগামী এমভি অ্যাডভেঞ্চার-৯। এসময় নদীজুড়ে প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা থাকায় দিক নির্ণয় করতে না পেরে অ্যাডভেঞ্চার-৯ লঞ্চটি জাকির সম্রাট-৩ কে সজোরে আঘাত করে।
যাত্রীরা আরো জানায়, দুর্ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত এমভি জাকির সম্রাট-৩ যখন মাঝনদীতে ডুবো-ডুবো অবস্থায় ভাসছিল, তখন ভোলা থেকে ঢাকাগামী এম.ভি কর্ণফুলী- নামে অপর একটি লঞ্চ দ্রুত এগিয়ে আসে। তারা অনেক যাত্রীকে উদ্ধার করে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি দুই লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত সংখ্যা ৪জন। সদরঘাট দুর্ঘটনা কবলিত লঞ্চটি পরিদর্শনে আসছেন নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন।