চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ’র সেচযন্ত্র অপারেটর কাম রেকর্ডকিপার নিয়োগ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন কর্মকতারা। নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের পর রাজনৈতিক চাপ ও বঞ্চিতদের হুমকিতে অফিসে যেতে পারছেন না তারা। ফলে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিএমডিএ’র অফিসকেন্দ্রীক কার্যক্রম কার্যতঃ স্থবির হয়ে পড়েছে। নিয়োগবঞ্চিতরা বলছেন, বিএমডিএ কর্তপক্ষ অপারেটর কাম রেকর্ডকিপার নিয়োগে গুরুতর অনিয়ম করেছে। বিএমডিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এক বছর মেয়াদে জেলার ১ হাজার ৬৫০ টি গভীর নলকূপ ও অন্য সেচযন্ত্রের অপারেট কাম রেকর্ড কিপার নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে বিএমডিএ। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফলাফল প্রকাশ করা হয় ৩০ ডিসেম্বর। এবার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ সেচযন্ত্রে নতুন অপারেটর নিয়োগ পেয়েছেন। বাকী সেচযন্ত্র পরিচালনার জন্য আগের অপারেটরদেরই বহাল রাখা হয়েছে। নিয়োগ বঞ্চিতদের অভিযোগ, এসব নিয়োগের বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। কোথাও কোথাও অর্থের বিনিময়েও হয়েছে নিয়োগ। ছাত্র-গৃহীনি বা স্কিমের আওতায় জমি নেই এমন ব্যক্তি নিয়োগ পেয়েছেন অপারেটর হিসেবে। এক উপজেলার গভীর নলকূপে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অন্য উপজেলার বাসিন্দাদের। নাচোল উপজেলার রুদ্রকুণ্ড মৌজার গভীর নলকূপে নিয়োগ বঞ্চিত নূর নবী বলেন, যে মৌজায় গভীর নলকূপ আছে আমি সে মৌজার স্থায়ী বাসিন্দা। অথচ আমাকে বাদ দিয়ে রাজশাহীর তানোর উপজেলার খালেদা খাতুনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খালেদা খাতুন একজন গৃহীনি। বিএমডিএ’র ইঞ্জিনিয়াররা অর্থের বিনিময়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলার চাকলা মৌজার শাহজাদা ইসলাম ১৮ বছর ধরে ওই মৌজার গভীর নলকূপের অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ বছর তাকে বাদ দিয়ে রাজশাহীতে অবস্থান করা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে দায়িত্ব দেয়া হবে। শহজাদা ইসলাম বলেন, আমার বাবার জমিতেই স্থাপিত রয়েছে গভীর নলকূপটি। অথচ আমাকে রাজনৈতিক কারণে বাদ দেয়া হয়েছে। ওই মৌজার কৃষক আনারুল ইসলাম বলেন, আমাদের যখন তখন পানির প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু অপারেটর যদি রাজশাহীতে থাকে তাহলে আমরা পানি পাব কিভাবে? ৩০ ডিসেম্বর ফলাফল প্রকাশের পর শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও নাচোল উপজেলা বিএমডিএ কার্যালয়ে কর্মকর্তা অফিসে যেতে পারছেন না। রাজনৈতিক চাপ ও নিয়োগবঞ্চিতদের হুমকির কারণে অফিসে যেতে পারছেন না তারা। যদিও জেলার রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশীদ বলেন, ফলাফল প্রকাশের পর যারা নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়নি, তারা একটু গ্রুপ হয়ে বিভিন্নভাবে রাজনীতির ছত্রছায়ায় অফিসে হুমকি দিচ্ছে। যার কারণে আমাদের অফিসের কর্মকর্তারা কর্মপরিবেশ ফিরে পাচ্ছেনা। কর্মপরিবেশ ফিরে না পাওয়া তারা অফিস করছে না। তবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অনেকগুলো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছে। যারা যোগ্য তাদেরকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে অনিয়ম বা উৎকোচ গ্রহনের কোন সুযোগ নেই। এরইমধ্যে নিয়োগ পাওয়া অপারেটরদের বাদ দেয়ার জন্য দুই শতাধিক আবেদন জমা হয়েছে বিএমডিএসহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে। গুরুতর অভিযোগ থাকলে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিএমডিএ’র কর্মকর্তারা।