ভালুকায় শহীদ তোফাজ্জল হত্যাকান্ড

৫ মাস অতিবাহিত এখনো মামলা হয়নি

এফএনএস (মোঃ আলমগীর হোসেন; ভালুকা, ময়মনসিংহ) : : | প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:২৪ পিএম
৫ মাস অতিবাহিত এখনো মামলা হয়নি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা আনন্দোলনের মিছিল থেকে ধরে নিয়ে রাজমিস্ত্রী তোফাজ্জল হোসেন (২৪) কে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে আ,লীগের সন্ত্রাসীরা। হত্যাকান্ডের পাচঁ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো মামলা হয়নি। হত্যার বিচার চান তার পরিবার। ৪ আগষ্ট সন্ধায় ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ওই ঘটনাটি ঘটে। 

ছাত্রজনতা মিছিলে শহীদ তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ী নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পিজাহাতি গ্রামে। সে মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। তার মা হারেজা খাতুন ও ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন (২১) কে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নগর হাওলা গ্রামের কাশেমের বাড়ীতে ভাড়ায় থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন তোফাজ্জল হোসেন। নিহত হওয়ার পাচঁ মাস পার হলেও পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। 

 বৈষম্যবিরোধী আনন্দোলনকারী নিহত তোফাজ্জল হোসেনে বন্ধু মামুন জানায়, ৪ আগষ্ট সন্ধায় তোফাজ্জলকে সাথে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা আনন্দোলনের মিছিলে যান তারা। মিছিলটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সিমান্তবর্তী জৈনা বাজার থেকে শুরু করে ভালুকার মাস্টাবাড়ী পৌছলে ক্ষমতাসীন আ’লীগের লোকজন লাঠিশোঠা নিয়ে ওই মিছিলের উপর হামলা চালায়। এতে মিছিটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় আ,লীগের সন্ত্রাসীরা রাজমিস্ত্রি তোফাজ্জল হোসেনকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। পরে আহত তোফাজ্জলকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে মাস্টারবাড়ি পপুলার ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ডাক্তার চিকিৎসা দেয়নি। সেখান থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সরকারী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই হাপাতাল কর্তৃপক্ষ  লাশ শ্রীপুর থানার এসআই ওয়াহিদুজ্জামানের কাছে হস্থান্তর করেন। পাচঁ আগষ্ট ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্থান্তর করা হয়। ছয় আগষ্ট সকাল সাড়ে নয়টায় তোফাজ্জলের গ্রামের বাড়ি পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। 

নিহত তোফাজ্জলের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন মামলা করা হয়নি। হত্যাকান্ডটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার করছে একটি মহল। মামলা না করার জন্য নিহতের মা ও ভাইকে ভয় দেখাচ্ছেন  হত্যাকারীরা। হত্যাকান্ডটি ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য আ,লীগ নেতা  রকিবুল হাসান নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে সদ্য সাবেক এমপি এমএ ওয়াহেদকে  প্রধান আসামী করে ১৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০০ জনের নামে আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করে কিন্তু কিন্ত আদালত মামলা আমলে নেয়ার আগেই বাদী অভিযোগ প্রত্যার করে নেয়। তার কিছু দিন পর আ,লীগের আরেক নেতা আব্দুল মান্নান ও হৃদয় মাহমুদ জান্নাত বাদী হয়ে আরো একটি অভিযোগ আদালতে দায়ের করে। পরে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। 

নিহত তোফাজ্জল হোসেনের মা হাজেরা খাতুন ছেলে হত্যার বিচার দাবী করে জানান, স্বামী মারা মারা যাওয়া পর অভাবের তারনায়  দুই ছেলে তোফাজ্জল হোসেন ও মোফাজ্জল হোসেনকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার কাশেমের বাড়িতে ভাড়ায় থেকে তোফাজ্জল রাজমিস্ত্রী ও মোফাজ্জল পোষাক কারখানায় এবং সে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন। ৪ আগষ্ট ছাত্রজনতা মিছিলে গিয়ে তোফাজ্জল হোসেন নিহত হয়। নিহতের পর থেকে মামলা না করান জন্য আ,লীগের নেতারা ভয় দেখান এবং হুমকি প্রদান করেন। তাই সে বাসা ছেড়ে গ্রামে চালে যান। মোফাজ্জল হোসেন মানুষের ক্ষেতে খামারে শ্রমিকের কাজ করে। ছেলে জীবন দিয়ে দ্বিতীয়বার দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্ত পরিবার কর্মসংস্থানের অভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। 

ভালুকা উপজেলার মাস্টারবাড়ি এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা জালাল উদ্দিন সরকার জানান, তার বাড়ির পাশেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাস্টারবাড়ি বাসস্ট্যান্ড কাঁচা বাজার। এ কাচা বাগজারে সামনে আ,লীগের সন্ত্রাসীরা তোফাজ্জলকে মিছিল থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তোফাজ্জল হোসেনকে এ ভাবে হত্যার পর এখনো মামলা হয়নি। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে হত্যার বিচার দাবী করেন। 

শ্রীপুর থানার এসআই ওয়াহিদুজ্জামান জানান,৪ আগষ্ট সন্ধা ৭টার দিকে সে শ্রীপুর সরকারী হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহন  করে লাশের সুরত হাল রির্পোট করা হয়। এসময় বিনা ময়না তদন্তে লাশ নেয়ার জন্য মাস্টারবাড়ী থেকে অনেক তদবির আসে। এর মধ্যে চিনা জানা কয়েকজন প্রভাবশালী লোক রয়েছে। সে কৌশলে সুরতহাল রির্পোট করে লাশ ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজুদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। নিহতের মাকে মামলা করতে বলা হলে তিনি অস্বীকৃতি জানান। 

ভালুকা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সামছুল হুদা খান জানান, থানায় কোন অভিযোগ করেনি কেউ। শুনেছি আদালতে দুইটি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল এবং পরে প্রত্যাহার করা হয়েছে।  নিহতের পরিবারে সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ হলেই যে কোন মুহর্তে মামলা রুজু হতে পারে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে