সরাইল বিএনপি সভাপতিকে গালমন্দ, নিরাপত্তায় পুলিশ

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
সরাইল বিএনপি সভাপতিকে গালমন্দ, নিরাপত্তায় পুলিশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা বিএনপি আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। অনুমোদনের ৪ মাস পর প্রকাশিত কমিটিতে জাপা আওয়ামীলীগের লোকদের অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগে চরম ক্ষুদ্দ হন দলটির ত্যাগী কারানির্যাতিত পদবঞ্চিত সাবেক নেতারা। তারা বলেন, কোন সাহসে ও আইনে সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতি ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকসহ অর্ধশতাধিক নেতাকে বর্তমান কমিটিতে রাখা হয়নি তার জবাব দিতে হবে। যদিও সভাপতি বলছেন গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বরই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে তারা উপজেলা সদরে সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে প্রকাশ্যে উচ্চ বাচ্য ও গালমন্দ করতে থাকেন। সেই সাথে নিজেদের আত্মীয় স্বজনের সমন্বয়ে গড়া পকেট কমিটি অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তখন উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিরাপদে অবস্থান তিনি। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে মূহুর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উভয় গ্রূপে। শতাধিক নেতা কর্মীর উপস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠে শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকা। দ্রূত ঘটনাস্থলে হাজির হন সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এস আই আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারা কিছু সময়ের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনিছ ঠাকুরকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেন। দলীয় ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত তিন বছরেরও অধিক সময় ধরে সরাইল উপজেলা বিএনপি’র গ্রূপিং দ্বন্ধ চলছে। দীর্ঘদিন কমিটির অনুমোদন না হওয়া। অনুমোদনের পর মাত্র ২ জনের নাম ঘোষণা করলেও বাকি ৯৯ জনের নাম ঘোষণা না করা নিয়ে দ্বন্ধ ও কাঁদা ছুড়াছুড়ি বাড়তেই থাকে। গত ৫ ই আগষ্টের পর সেই দ্বন্ধ ক্রমশই আরো বেড়ে চলেছে। একটি বলয়ের নেতৃত্বে  দীর্ঘ ২৭ বছরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মাষ্টার। আরেকটি বলয়ের নেতৃত্বে বর্তমান সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুর ও সাধারণ সম্পাদক এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপু। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের মাঠে নেমে পড়েছেন আরো আগেই। মনোনয়ন চান এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুও। তখন বিভক্তি আরো পরিস্কার ও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মঞ্চে ময়দানে সভা সেমিনারে উভয় বলয়ের বক্তব্যে তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও পরিস্কার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দীর্ঘ দুই বছর পর ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জেলা কমিটির আহবায়ক আবদুল মান্নান ও সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ১০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পায়। এখানেও সভাপতি সম্পাদকের নাম আলোর মুখ দেখলেও বাকি ৯৯ জনের নাম প্রকাশ পায়নি। দীর্ঘ ৪ মাস পর গত ২-৩ দিন আগে ওই পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হয়। কমিটি দেখে ক্ষোভে ফেঁটে পড়েন পদ বঞ্চিত সাবেক নেতারা। কারণ এই জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের একাধিক অন্তর্ভূক্ত করে সাবেক কমিটির প্রায় ৬০ নেতাকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করছেন তারা। আর এই ক্ষোভেই পদবঞ্চিত নেতারা গতকাল বিকেলে উপজেলা সদরে দলটির সভাপতি আনিছুল ইসলাম ঠাকুরকে দেখে গালমন্দ চিৎকার চেঁচামেচি শুরূ করেন। এতে করে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে ছিল। তবে পুলিশের দ্রূত উপস্থিতি পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করেছে। সাবেক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক-২ নাজমুল আলম খন্দকার মুন্না বলেন, শুধু ২-৩ জনের কমিটি দিয়ে ৩ বছর লুটপাট করেছে। ওরা তো দল থেকে বহিস্কৃত ও পদত্যাগকারী। দলের দু:সময়ে নিজেদের রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগের সাথে দালালি করে চলেছে। এখন টাকার বিনিময়ে অরাজনৈতিক লোক, কোন মামলার আসামী না, জাপা আ’লীগ ও আত্মীয় স্বজন দিয়ে কমিটি করেছে। কবর দিয়েছে দলের ত্যাগী ও নির্যাতিতদের। দালালদের ওই পকেট কমিটি মানি না। মানব না। অবিলম্বে ওই মনগড়া কমিটি বাতিল না করলে কঠোর কর্মসূচি দিব। ওই দুই নেতা পালানোর পথ পাবে না। তবে সভাপতি মো. আনিছুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, অভিযোগ গুলো সঠিক নয়। আনোয়ার আমাকে দেখেই উচ্চ স্বরে গালমন্দ শুরূ করে। আমি কোন জবাব না দিয়ে ভূমি অফিসে চলে গেছি।  দলের জন্য নিবেদিত ত্যাগী ও ফ্যাসিস্ট সরকারের গায়েবী মামলায় কারাবরণকারীদের মূল্যায়ন করেই কমিটি করা হয়েছে। আমরা গালমন্দ উচ্চবাচ্য ও বিশৃঙ্খলায় বিশ্বাসী নয়। এখন গ্রূপিং দ্বদ্ধের সময় না। নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে দলের হাতকে শক্তিশালী করার সময়। সকলকে অনুরোধ করব ধৈর্য্যধারণ করে আসুন দল গুছানোর কাজে মনোনিবেশ করি। সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা এস আই আব্দুর রহমান বলেন, আমরা আনিছ ঠাকুরের উপর এক গ্রূপ চড়াও এতে করে বিশৃঙ্খলা দাঙ্গা হাঙ্গামা লেগে যেতে পারে। এমন ম্যাসেজ পেয়ে দ্রূত উপজেলা চত্বরে চলে আসি। উভয় গ্রূপের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। আমরা সকলের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছি। পরে আনিছ ঠাকুরকে উনার লোকজনের সাথে অটোরিকশায় উঠিয়ে দিয়েছি।     

প্রসঙ্গত: গত ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল কালিকচ্ছের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে আনিছুল ইসলামকে সভাপতি, এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুকে সাধারণ সম্পাদক ও ডি এম দুলালকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে সরাইল উপজেলা বিএনপি’র ৩ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এর প্রায় আড়াই বছরেরও অধিক সময় পর গত ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জেলার আহবায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত ১০১ সদস্যের সরাইল বিএনপি’র কমিটির অনুমোদন দেন। এরমধ্যে সভাপতি আনিছ ঠাকুর ও সম্পাদক এড. নুরূজ্জামান লস্কর তপুর নাম প্রকাশ করা হলেও বাকি ৯৯ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। এতে করে অপজিট গ্রূপসহ গোটা বিএনপিতেই একটা কানা ঘুষণা ছিল। গত ২-৩ দিন আগে ১০১ সদস্যের কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর চরম ভাবে ক্ষিপ্ত হয় আনোয়ার হোসেন তার অনুসারি এমনকি খোদ বর্তমান কমিটির অনেক সদস্যও।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে