রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার কুশাবাড়িয়া গ্রামের বীর প্রতীক আজাদ আলীকে (৭৬) বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বাদ আসর বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
বীর প্রতীক আজাদ আলীর প্রথম জানাজা গার্ড অব অনারের মাধ্যমে আড়ানী ডিগ্রী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। তাকে ঢাকা থেকে সেনাবাহিনির বিশেষ হেলিকপ্টর যোগে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে আড়ানী সরকারি মনোমোহিনী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করা হয়। পরে জানাজা শেষে একই হেলিকপ্টরে দুপুর ২টার দিকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বাদ আসর বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন সম্পূন্ন করা হয়।
সোমবার (১৩ জানুয়ারী) রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি---রাজিউন। বর্তমানে তিনি ঢাকার বারিধারা ডিওএইচএসে বসবাস করতেন। তাঁর স্ত্রী আজাদ সুলতানা ও দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার আড়ানী পৌরসভার কুশাবাড়িয়া গ্রামের মৃত আরজান আলী প্রামাণিক ও মা রাজিয়া খাতুন দম্পতির ছেলে বীর প্রতীক আজাদ আলী ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর তার নেতৃত্বাধীন গেরিলাদলের ওপর টহল ট্রেনে অ্যামবুশের দায়িত্ব পড়ে লালপুরের নাবিরপাড়ায়। সেদিন লাইনের নিচে বিস্ফোরক স্থাপনের পর তাঁরা যখন মাইনের সঙ্গে যুক্ত তার আড়াল করছিলেন, তখন দূরে ট্রেনের আলো দেখতে পায়। ট্রেনটি অদূরে আবদুলপুর রেলওয়ে জংশনে এসে থেমে যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আজাদ আলী সহযোদ্ধাদের নিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করছিলেন। কথা ছিল, টহল ট্রেন অ্যামবুশস্থলে এলে তাঁরা বিস্ফোরণ ঘটাবেন। কিন্তু তাঁর এক সহযোদ্ধার ভুলে ট্রেন আসার আগেই ছয়টি মাইন একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণের পর আজাদ আলীর বাঁ হাতের কবজি উড়ে যায়। বিস্ফোরণে ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি খাদের ভেতর উল্টে পড়ে। এতে ১৬ জন পাকিস্থানি সেনা হতাহত হয়।
এ বিষয়ে বীর প্রতীক আজাদ আলীর বড় ছেলে মোহাম্মদ রুবায়েত আহসান বলেন, ১৯৭১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে অনার্স থার্ড ইয়ারে লেখাপড়া অবস্থায় স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বাবা। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেকগুলো সফল মিশন সমাপ্ত করেন, যুদ্ধে তার বাম হাতের কব্জি মাইনে আক্রান্ত হয়। পরবর্তীতে হাত কেটে ফেলতে হয়। পরে রাষ্ট্র বাবাকে ‘বীর প্রতীক’ বীরত্বসূচক পদবীতে ভূষিত হন। মে মাসে ভারতে যান। জুনের শেষে মুক্তিবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করে চাকুলিয়ায় প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব-সেক্টর এলাকায় গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন।
বীর প্রতীক আজাদ আলী প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এডিশনাল ডাইরেক্টর হিসেবে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনে ফাইনান্স অফিসার থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালে অবসর গ্রহন করেন। হটাৎ ১ জানুয়ারি অসুস্থ হলে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বীর প্রতীক আজাদ আলীর গার্ড অনার প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ফুলের সম্মাননা দেন জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, আড়ানী পৌর প্রশাসক, আড়ানী পৌর বিএনপি, নিজ গ্রাম কুশাবাড়িয়াবাসী।