বিএনপির শিক্ষক বাদ

ভোটার তালিকা হালনাগাদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ

এফএনএস (রওশন জাহান; মহাদেবপুর, নওগাঁ) : | প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম
ভোটার তালিকা হালনাগাদে ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ


 নওগাঁর মহাদেবপুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কাজে একের পর এক ফ্যাসিবাদের দোসরদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের। এনিয়ে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা আশংকা করছেন, এদের দিয়ে ভোটার তালিকা হাল নাগাদের কাজ করালে সঠিক তথ্য উপস্থাপন হবেনা, বরং ইচ্ছে করেই তারা ভোটার তালিকায় গড়মিল করতে পারবেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, গতবারের তালিকা থেকেই নাম নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের জন্য উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে দুইজন করে মোট ২০ জন সুপারভাইজার এবং তাদের আওতায় প্রতি ইউনিয়নে পাঁচজন করে মোট একশ’ জন তথ্য সংগ্রহকারি নিয়োগ দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) তাদের প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু ওই ১২০ জনের তালিকায় বেশিরভাগই ফ্যাসিবাদের দোসরদের নাম দেখা যায়। তালিকা অনুযায়ী মহাদেবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষকদের আওয়ামী লীগ সমর্থিত গ্রুপের নেতা বলে পরিচিত, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে জাহাঙ্গীরপুর সরকারি কলেজের ভিপি নির্বাচিত হওয়া পাহাড়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে এবারও সফাপুর ইউনিয়নের ৪, ৬, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচিত মহাদেবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও রামচন্দ্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রঞ্জন কুমার মন্ডলকে খাজুর ইউনিয়নের ৩, ৪, ৫. ৬, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার ছোট ভাই উজ্জল কুমার মন্ডল বর্তমানে খাজুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু বিএনপি সমর্থিত গ্রুপের নেতা বলে পরিচিত, মহাদেবপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি, বিএনপির ব্যানারে নির্বাচিত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সরস্বতিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বানী ইসরাইল গতবার সুপারভাইজারের দায়িত্ব পালন করলেও এবং এবারও ওই দায়িত্ব পালনের আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাকে এবার বাদ দেয়া হয়। চাঁন্দাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৭ নং ওয়ার্ড কমিটির বর্তমানে সহ-সভাপতি ও বাগডোব উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হযরত আলীকে চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ও চাঁন্দাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেনকে চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ৪. ৫. ৬. ৭. ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রোদইল টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের প্রদায়ক, বিকর্কীত সাংবাদিক, যিনি তার কলেজ সময় সকাল ৯টা থেকে ৪টা পর্যন্ত হলেও ফ্যাসিবাদের সময় থেকে কলেজ ফাঁকি দিয়ে উপজেলা সদরে এসে বিভিন্ন সময় সভা সমিতি ও অনুষ্ঠানে যোগদান করেন, যিনি ফ্যাসিবাদের আমলে প্রশাসনিক সবরকম সুযোগ গ্রহণ করেছেন, যাকে কখনো রাজপথের আন্দোলনে দেখা যায়নি, যিনি কোন মামলা খাননি, যিনি কোনদিন জেলে থাকেননি, যিনি সাবেক এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদারের প্রেস সচিব বলে পরিচিত ছিলেন, সেই সাখাওয়াত হোসেনকে এনায়েতপুর ইউনিয়নের ৪. ৫. ৬. ৭. ৮ ৯ নং ওয়ার্ডের সুপারভাইজার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া নিয়োগ দেয়া ১০০ জন তথ্য সংগ্রহকারির মধ্যে বেশিরভাগই রয়েছেন ফ্যাসিবাদের দোসর। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আল মামুন জানান, তিনি নিজেই নিবন্ধন কর্মকর্তা হিসেবে এসব সুপারভাইজার ও তথ্য সংগ্রহকারি নির্বাচন করেছেন। এজন্য তিনি কারো সহযোগিতা নেননি। তবে গতবারের তালিকা থেকেই এদের নাম নেয়া হয়েছে। কিছু নতুনও নেয়া হয়েছে। কেউ ফ্যাসিবাদের দোসর কিনা তা তিনি খতিয়ে দেখেননি। বিএনপির শিক্ষককে কেন বাদ দেয়া হলো তারও কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। স্থানীয়রা বিষয়টি তদন্ত করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাদ দিয়ে নতুন করে তালিকা তৈরি করার দাবি জানান।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে