সরাইলে নদী সেচে হতাশ কৃষকরা

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
সরাইলে নদী সেচে হতাশ কৃষকরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের কুইট্টা সেতুর দুই পাশে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল তিতাস নদীর শাখা পুটিয়া নদীতে প্রতিবছরের এ সময়ে বাঁধ দিয়ে পানি সেচে নদীর তলদেশ থেকে মৎস্য নিধন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে ৫-৬টি সেচ যন্ত্রে (শেলু মেশিনে) দিনে রাতে নদী সেচের কাজ করছিল। নদীর পানি কমতে থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন স্থানীয় কৃষকরা। আর ঝুঁকি বাড়তে থাকে ফসল সড়ক ও নদীর উপরের ব্রীজের। অভিযোগ ওঠেছে দূর্গাচরণ দাস ও জজ মিয়ার বিরূদ্ধে। লীজের বিধি অমান্য করে মোটা অংকের চুক্তি মূল্যতে জেলেদের কাছে পানির নীচের মাছ করছেন তারা। তাই সেখানকার ৪৭ জন কৃষক নদীর পানির সেচ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ব্রাহ্মণবাড়িয়া বরাবরে গত ১৪ জানুয়ারি লিখিত আবেদন করেছেন। লিখিত অভিযোগ, সরজমিন অনুসন্ধান ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়,  সরাইল উপজেলাধীন কালীকচ্ছ মোজাস্থ ‘বিল মোড়ল গজারিয়া কুড়ি’ জল মহালটি ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিমিটেডের অনুকূলে লীজ প্রদান করা হয়। ১০৫৭৬ দাগের জল মহালটির মধ্যভাগের বড় অংশে গভীরতম কয়েক একর জায়গার একটি গর্ত রয়েছে। এটিকে সকলেই কুড় বলেন। কুড়ের চারিদিকে প্রজার যৌথ সম্পত্তি ও কৃষি জমি রয়েছে। ওই কুড় বা গর্তের পানি দিয়ে কৃষকরা তাদের শতশত বিঘা জমিতে ধান চাষ করে আসছেন। নুর আহাম্মদ জজ মিয়া নামের ব্যক্তি নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জজ মিয়া ও দূর্গাচরণের লোকজন মোটর দ্বারা পানি সেচ করে নদী শুকিয়ে  নদীর মৎস্য প্রজনন ক্ষমতা ধ্বংস ও ফসল উৎপাদন ব্যাহত করে। কুড়ের পানি শুকিয়ে কাঁদা মাটি টানাটানি করায় সিএন্ডবি সড়ক ও ব্রীজটি ঝুঁকিতে পড়ে। কারণ ব্রীজের খুটি গুলোর গোড়ার মাটি সরতে থাকে। সেচ করে নদী শুকিয়ে ফেলার পরে সেখানকার ইরিবোরো ধান চাষ বাঁধা গ্রস্ত হয়। কারন ওই নদীর পানিই সেখানকার ফসলি জমিকে বাঁচিয়ে রাখে। তাই কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। সেইজন্য তারা জেলা প্রশাসকের শরনাপন্ন হয়েছেন। গত সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন ও অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রফিকুল হাসান ওই সেচ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু পানি সেচের মোটর বৈদ্যুতিক সংযোগ ও তাদের অস্থায়ী আবাসস্থল এখনো আছে বহাল তবিয়তে। পুনরায় সেচ কাজ চালানোর জন্য তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। পানি সেচের দায়িত্বে থাকা প্রানো দাস হাত উঁচিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হাওরে উম্মুক্ত জলাশয়ের বিশাল এলাকার একদিকে একটি গাছ দেখিয়ে বলেন, সেখান থেকে আমরা এই কুড় পর্যন্ত দূর্গা চরণকে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি। জজ মিয়াকেও দিয়েছি। বিদ্যুতের জন্য শিপন মেম্বারকে দিয়েছি ১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে বিলে আমরা ৫১ লাখ টাকা খরচ করেছি। এখনো কিছুই পায়নি। ১০-১৫ দিন ধরে সেচ কাজ চালিয়ে আসছি। গত সোমবার রাতে ইউএনও স্যার এসে বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন কতদিন বেকার বসে থাকতে হয় আল্লাহই জানেন। পানির গভীরতা এখনো ১২ ফুট। কমপক্ষে আরো ৮-১০ ফুট পানি না কমালে মাছ ধরা যাবে না। এবার লাভ করতে পারব না। স্থানীয় একাধিক কৃষক বলেন, প্রতি বছরই একটি মহল আইন অমান্য করে এ কাজটি করলেও এর কোন স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। কৃষক মেরে দেশীয় মাছের বংশ বিস্তার নষ্ট করে একটি সিন্ডিকেট নিজেদের স্বার্থ হাসিল করবে। এটা তো হতে পারে না। ধর্মতীর্থ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি দূর্গাচরণ দাস বলেন, আমি সাব লীজ দেয়নি। ১৪ হাজার টাকা নেয়নি। তারা মিথ্যা কথা বলছেন। ’তরী’ বাংলাদেশের আহবায়ক শামীম আহমেদ ও সরাইল শাখার সদস্য সচিব মো. শাহগীর মৃধা বলেন, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে এভাবে নদী ধ্বংস করে মাছের প্রজনন ধ্বংস ও ফসলি জমির ক্ষতি করতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে প্রশাসনকে সহায়তা করতে তরী পরিবার মাঠে নামবে। সরাইল উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বলেন, লীজ নেওয়া নদী বিল বা জলমহালের পানির সীমানা দেখিয়ে অন্য কারো কাছে সাবলীজ বা বিক্রি করা সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা জলমহাল কমিটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কোন জলমহালই সাবলীজ দেওয়ার কোন বিধান নেই। নদী থেকে নদীতে বাধ দেওয়াও সম্পূর্ণ নীতিমালা পরিপন্থী। সেচ করে নদী শুকানোর কোন বিধান নেই। যে বা যারা এই কাজ গুলো করবে তাদের বিরূদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে