বাংলা পঞ্জিকা যদিও বলছে এখন মাঘ মাস, কিন্তু আবহাওয়ার ঘনঘন তারতম্যে কি তা মনে হচ্ছে? বাতাসে হালকা হালকা ঠান্ডার আমেজ। গা শিরশিরানি ভাব। না যাচ্ছে সোয়েটার-শালকে ভুলে যাওয়া, না যাচ্ছে বসন্তের হাতছানিতে সাড়া দেয়া। মাঝখান থেকে বাঁধ সাধার জন্য গলা ব্যথা, কাশি, জ্বর, রুক্ষ ত্বক, শুষ্ক চুলের সমস্যা তো আছেই। তাই বলে কি শীতের এই সময়টা উপভোগ করবেন না? নিশ্চয়ই করবেন! জেনে নিন আপনার করণীয়।
নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করুন
শীতের শুরু ও শেষের দিকের সময়ে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। কারণ ঠান্ডা আবহাওয়ায় পানি পান করার প্রবণতা কমে যায়। তাই বেশি করে পানি পান করুন। বিভিন্ন ধরনের স্যুপ, দুধ, ফলের রস খেতে পারেন। মাঝে মাঝে ডাবের পানিও পান করতে পারেন। দুধ ছাড়া চা তিন-চার ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে পান করুন। এটি পানির সাথে সাথে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজও করবে।
প্রোটিন জাতীয় খাবার শরীরের তাপমাত্রা বজায় রেখে শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে। মৌসুমি শাকসবজি ও ফল যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, গাজর, কমলা, আপেল ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে খেতে হবে। এগুলোতে উপস্থিত ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের সজীবতা বজায় রাখে, হজমে সহায়তা করে, শরীরের নিস্তেজ ভাব কাটায়। টাটকা ফল ও সবজিতে উপস্থিত বায়োটিন ত্বক ও চুল ভালো রাখে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধি খাবার যেমন কমলা, লেবু, পেয়ারা, টমেটো প্রতিদিন খান। ফলমূল, শাকসবজির সাথে গোটাদানাশস্য, সয়াবিনজাতীয় প্রোটিন সমৃদ্ধি খাবার খান। এ ছাড়া মিষ্টি আলু, মূলা, বিটের মতো মূলজাতীয় সবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার যেমন চিনি, ময়দা, গমজাতীয় খাবার কম খান।
ত্বক ও চুলের যত্ন নিন
আবহাওয়ার এই ওঠানামার সাথে সাথে ত্বকের আর্দ্রতা কমতে থাকে। ঘরের ভেতর এবং বাইরের তাপমাত্রায় যেহেতু একটা পার্থক্য দেখা যায় তাই ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে যায়। তাই অন্তত তিন-চার বার ময়েশ্চারাইজার লাগানো দরকার। পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার পর মুখে ভেজা ভাব থাকতে থাকতেই ময়েশ্চারাইজার লাগান। সারাদিনের জন্য ওয়াটার বাইন্ডিং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। শীতকালে শরীরের অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক এবং খসখসে হয়ে যায়। গোসল করার পর ভেজা গায়ে হালকা হাতে অলিভ অয়েল মেখে নিলে ত্বকে আর্দ্রতার ভাব বজায় থাকে অনেকক্ষণ।
শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া এবং সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মির কারণে চুলের চকচকে ভাব নষ্ট হয়ে যায়। চুলের আগা ফাটে, অনুজ্জ্বল হয়ে যায়, চুলের গ্রোথ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। খুশকি দেখা দেয় এবং চুল পড়ে যাওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যায়। তাই চুলে নিয়মিত তেল লাগান। সপ্তাহে দুই বারের বেশি শ্যাম্পু না করাই ভালো। চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
শীতকালীন খেলাধুলা
ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সর্দি-কাশির মতো সমস্যা থেকে আপনাকে দূরে রাখে। তবে একঘেয়ে ব্যায়াম করতে ইচ্ছে না করলে শীতকালীন খেলাগুলো ট্রাই করতে পারেন। যেমন ব্যাডমিন্টন, স্কোয়াশ, টেনিশ ইত্যাদি শীতের জন্য একদম যুতসই খেলা। বন্ধুবান্ধবদের দলে সামিল করে নিন, এতে আরো বেশি করে উপভোগ করতে পারবেন।
সঠিক পোশাক বাছুন
ঠান্ডা আবহাওয়ায় সুতি, লিনেনের পরিবর্তে সিল্ক, তসরের পোশাক পরুন। বাইরে বের হলে গরম কাপড় তো পরবেনই, প্রয়োজনে মোজা ও গ্লাভস পরতে পারেন। শিশুদের ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য অতিরিক্ত জামাকাপড় পরিয়ে দেবেন না। কারণ তারা তো ছুটোছুটি বেশি করে, তাই শরীর গরম হয়ে থাকে। অতিরিক্ত কাপড় পরা থাকলে ঘেমে গিয়ে শরীর খারাপ হতে পারে।