২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সিলেট এম.এ.জী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন শেরপুর সদরের পূর্ব কুমরীর কৃষক পরিবারের মেয়ে মোছা. তাহমিনা আক্তার তামান্না। সে মেধা তালিকায় ১৮৯৬ তম। ভর্তি পরীক্ষায় পেয়েছে ৮১ দশমিক ৫ সেই হিসেবে তার মেরিট স্কোর দাঁড়িয়েছে ১৭৮ দশমিক ৫। তার ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ। তাহমিনা আক্তার তামান্না সাধারণ এক কৃষক পরিবারের সন্তান। কৃষক বাবাসহ পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে তামান্নার মেডিকেলে পড়ার স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নিজের চেষ্টা, পরিবারের সদস্যদসহ শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোনো বাধাই দমিয়ে রাখতে পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেড়ে উঠা তামান্নার শিক্ষাজীবনের পথ চলাকে। অদম্য সেই তামান্না এবার এম.এ. জী ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর এর মধ্য দিয়েই প্রমাণ হয়েছে ‘ হড় ঢ়ধরহং, হড় মধরহং’. অর্থাৎ কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। তাহমিনা আক্তার তামান্না শেরপুর জেলার শেরপুর সদরের বাজিতখিলা ইউনিয়নের পূর্ব কুমরী গ্রামের এক অতি সাধারণ পরিবারের সন্তান। বাবা মো. তোফায়েল ইসলাম (দারোগআলী) পেশায় একজন সাধারণ কৃষক ও মা হুনুফা বেগম গৃহিণী। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তামান্না ছোটবেলা থেকেই অদম্য মেধাবী ছিলেন। বাজিতখিলা ইউনিয়নের বসুন্ধরা একাডেমি থেকে ২০১৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫.০০পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৮৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২১ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাশ করেন। পরে শেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ পান তিনি। এ ছাড়া তাহমিনা আক্তার তামান্না শিক্ষাজীবনে বৃত্তিসহ বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেন। এদিকে শেরপুর সদর উপজেলা থেকে সিলেট এম.এ. জী ওসমানী মেডিকেলে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার তামান্নার পরিবার, তার নিজ গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। গ্রামের মেম্বার সামছুল হক বলেন, মেডিকেল চান্স পাওয়া অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। তার এই অর্জন সত্যিই আমাদের এলাকার গর্বের। আমাদের এলাকায় তাহমিনা আক্তার তামান্নাই প্রথম সরকারি মেডিকেল পড়ার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থী। তাহমিনা আক্তার তামান্না বলেন, এম.এ. জী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পাওয়ায় প্রথমেই মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সরকারি মেডিকেলে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান ডাক্তার হয়ে নিজ গ্রামসহ আমাদের উপজেলার দরিদ্র-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। তাহমিনা আক্তার তামান্না আরও বলেন, আমি সাধারণ কৃষক পরিবারের একজন সন্তান। আমার এই ভালো ফলাফলের পেছনে মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবদানের পাশাপাশি যিনি এতদূর যেতে সাহস যুগিয়েছেন তিনি হলেন আমার বড় ভাই মৌলভী হাসান আকন্দ। মেয়ের এই সাফল্যে আনন্দে কেঁদেই ফেলেন তামান্নার মা-বাবা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেয়ের সাফল্যে খুব আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের পুরস্কৃত করেছেন। আমাদের মেয়ে যাতে ভালো ডাক্তার হয়ে গরিব ও অসহায় মানুষের সেবা করতে পারে, সে জন্য সবার দোয়া কামনা করছি। তামান্নার বড় ভাই মৌলভী হাসান আকন্দ বলেন, ছোটবেলা থেকেই তামান্না লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। অবশেষে আমাদের পরিবারের সবার প্রচেষ্টা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি তামান্নার নিজ প্রচেষ্টায় সে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। সিলেট এম.এ.জী ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চান্স পাওয়ায় তাহমিনা আক্তান তামান্নাকে অভিনন্দন জানিয়ে বাজিতখিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররম বলেন, তামান্না তার লালিত স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে একজন গর্বিত ডাক্তার হয়ে যেন দেশের সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারেন।