লবণাক্ততায় বরিশাল অঞ্চলের কৃষি জমিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার তীব্র শঙ্কা

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:১৯ এএম
লবণাক্ততায় বরিশাল অঞ্চলের কৃষি জমিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার তীব্র শঙ্কা

লবণাক্ততায় ধান-নদী-খাল স্বীকৃতি বরিশাল অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা তীব্র হচ্ছে। হুমকির মুখে লাখ লাখ কৃষি জমি। ওই অঞ্চলের প্রায় ৫২ শতাংশ ফসলি জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি সামলে ব্যবস্থা না নিলে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা বাড়ছে। মূলত ওই অঞ্চলের নদ-নদীর পানি দিন দিন মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। মাত্র ১০ বছর আগে যেখানে চারটি নদীতে শুকনো মৌসুমে লবণাক্ততা দেখা যেতো, সেখানে এখন অন্তত ২০টি নদীতে তা দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি উৎপাদনে সেচের জন্য নদীর পানিতে প্রতি মিটারে দশমিক ৭ ডিএস ও মাটিতে প্রতি মিটারে ২ ডিএসের নিচে লবণাক্ততা সহনীয়। কিন্তু সেখানে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেশি বিদ্যমান।  মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, বরিশাল অঞ্চলে নদ-নদীর পানিতে প্রতি মিটারে সর্বোচ্চ ১৫-২০ ডিএস লবণাক্ততা ও মাটিতে প্রতি মিটারে সর্বোচ্চ ২৫ ডিএস লবণাক্ততার চিত্র বরিশাল মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের গবেষণায় উঠে এসেছে। এক দশক আগে ওই অঞ্চলের আন্ধারমানিক, আগুনমুখা, বিষখালীসহ অন্তত চারটি নদীতে শুকনো মৌসুমে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা পাওয়া যেতো। কিন্তু বর্তমানে বরিশালের কীর্ত্তনখোলা, ভোলার মেঘনার একাংশ, বলেশ্বর, কারখানাসহ অন্তত ২০টি নদ-নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। যা ওই অঞ্চলের ফসল উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ দাঁড়াচ্ছে। সূত্র জানায়, বরিশাল বিভাগে বর্তমানে চাষযোগ্য ৮ লাখ ২ হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৪ লাখ ১৫ হাজার হেক্টর লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে, যা মোট জমির ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৮০ হেক্টর (৩৯ শতাংশ) লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে। আর বরগুনায় ৯৫ হাজার ৬২০ হেক্টর, ভোলায় ৯৪ হাজার ৫৭০ হেক্টর, পিরোজপুরে ৩৫ হাজার ৮৩০ হেক্টর, বরিশালে ১২ হাজার ৩৬০ হেক্টর ও ঝালকাঠিতে ৪ হাজার ৬২০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে নদী ও মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ কিছু কমে এবং বৃষ্টি কম হলে বাড়ে। বর্তমানে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ স্থায়ী লবণাক্ততার দিকে যেতে শুরু করেছে। আগামীতে ওসব এলাকায় সাধারণ ফসল চাষ করা যাবে না। তবে লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ফসল চাষ করা যাবে। সূত্র আরো জানায়, এদেশের পরিবেশ প্রকৃতিনির্ভর। বৃষ্টি ও তাপমাত্রা সহনীয় হলে লবণাক্ততার চিন্তা থাকে না। কিন্তু গত বছর এপ্রিলে বরিশালে দাবদাহ হয়েছে। চলতি শুকনো মৌসুমেও চলমান থাকলে বিপদ বাড়বে। মাটিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ১০ বা ১২ ডিএস পার মিটার হয়ে গেলেই তা আর চাষযোগ্য থাকে না। ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলের প্রায় দুই হাজার মাটি ও পানির নমুনা নিয়ে পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু তার ফল খুবই হতাশাব্যঞ্জক। শুকনো মৌসুমে নভেম্বর থেকে লবণাক্ততা বাড়তে থাকে। ফলে পানি ও মাটির গুণাগুণ কমছে। এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, পটুয়াখালীতে এখন লবণাক্ত জমির পরিমাণ ৩৯ শতাংশ আর বরিশালে ৩ শতাংশ। যখন পটুয়াখালীতে জমিতে লবণাক্ততা ৩ শতাংশ ছিল, সেদিন থেকে ভবিষ্যতের ভয়াবহতার কথা বলা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। একটা সময় বরিশাল বিভাগের পানি ও মাটির ১০০ ভাগ লবণাক্ততায় ছেয়ে যেতে পারে। মাত্র ১০ বছরে বরিশালের অর্ধেক চাষযোগ্য জমি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বরিশালের নদ-নদী থেকে অনেক মাছ আর মাটি থেকে অনেক ফসল হারিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে বরিশাল মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একীম মামুন জানান, এক দশক আগেও বরিশাল অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) তিন-চারটি নদীতে লবণাক্ততা পাওয়া যেতো, এখন বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে প্রায় ২০টিতে তা মিলছে। ওসব নদ-নদীতে সাগরের লবণ পানি ঢুকে যাচ্ছে। পানিতে লবণাক্ততা বাড়লে মাটিতেও তা বাড়বে এটা স্বাভাবিক। এটি ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তবে এটা খুব কঠিন কাজ। মাটিতে প্রতি মিটারে ৮ ডিএস পার মিটারে লবণাক্ততা এলে তা ফসল উৎপাদনে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে