৬ মাস পেরিয়ে যাবার পরও কুড়িগ্রাম জেলার সরকারি দপ্তরের তথ্য বাতায়ন থেকে সরানো হয়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পরিবারের অন্যান্যদের ছবি। নোটিশ বোর্ডগুলোতেও শোভা পাচ্ছে বিগত সরকারের নানা কর্মকাণ্ড। এসব দেখার যেন নেই কেউ।
জেলার একাধিক সরকারি দপ্তরগুলোর ওয়েবপোর্টালের কভার পেজে শোভা পাচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি,বঙ্গবন্ধুর জন্মশর্ত বার্ষিকীর লোগো, শেখ রাসেল এর ছবি। পাশাপাশি নোটিশ বোর্ডে এখনও দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর শততম বছর উদযাপনের প্রস্তুতির বিস্তারিত, বিগত সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের তথ্য। ওয়েব পোর্টালগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পালিয়েছে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা।
সরকারী কর্মকর্তাদের খামখেয়ালীপনা আর উদাসীনতায় বর্তমান সরকারের কোন কর্মকান্ড ও ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে।
একাধিক সরকারি ওয়েবসাইট গুলো ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের কভার পেজে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকীর লোগো, নাগেশ্বরী বন অফিসে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আমান উদ্দিন আহমেদের ছবি, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি, উপজেলা শিক্ষা অফিসে শেখ রাসেলের একাধিক ছবি,বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে শেখ হাসিনার ছবি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরে বঙ্গবন্ধুর শততম বার্ষিকী উদযাপনের র্যালীর কর্মকান্ড, সাবেক জেলা প্রশাসক ও বঙ্গবন্ধুর ছবি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে শেখ রাসেলের জন্মদিনের শুভেচ্ছা, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা, পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিগত সরকার প্রধানের নানা প্রতিশ্রুতির কর্মকান্ড, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে শেখ হাসিনা, বন বিভাগে বঙ্গবন্ধুর শোক ব্যানার, পৌর আ.লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র কাজিউল ইসলাম, জেলা আ.লীগ নেতা সাঈদ হাসান লোবানের ছবি, কাস্টমস এক্সসাইজ এ্যান্ড ভ্যাট শোক দিবস পালনের কর্মসূচি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি, এলজিইডি অফিসে শোক দিবস পালনের কর্মসূচির ছবি, কুড়িগ্রাম ডাকঘরে সাবেক মন্ত্রী তারানা হালিম, শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেলের ছবি ইত্যাদি।
জেলা নাগরিক কমিটির সংগঠক রাশেদুজ্জামান তাওহিদ বলেন,’ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছি। নতুন সরকারের ৫ মাস পার হবার পরও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছবিসহ তার পরিবারের ছবি থাকা আমাদের জন্য অপমানজনক। আমরা দ্রুত বাতায়ন থেকে এসব আপসারণের দাবি জানাই ও এসব দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসীনতার শাস্তির দাবি করছি।’
জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন,’কুড়িগ্রামের সরকারি কর্মকর্তাদের খাম-খেয়ালিপনার কারণে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনান ছবি না সরানো খুবই দুঃখজনক। আমরা দ্রুত স্বৈরাচার হাসিনার এসব কর্মকান্ড তথ্য বাতায়ন থেকে অপসারণ চাই।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন,’স্বৈরাচারী হাসিনার পতন ঘটার ৫ মাস পার হলেও সরকারি ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনার ছবি ও কর্মকান্ড থাকাটা অন্যায়। আমরা কর্মকর্তাদের এমন উদাসীরতা বরদাস্ত করবো না। দ্রুত দায়িত্বপ্রাপ্তদের এই ছবি সরানোর জোর দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে জানতে সংশ্লিষ্ট অফিসের একাধিক কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে প্রশ্নটি শোনার পর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কেটে দিয়ে ফোনটি বন্ধ করায় অধিকাংশ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজনের সাথে কথা বললে তাদের নজরে পরার বিষয় স্বীকার করেন।
কুড়িগ্রাম ডাকঘরের পোস্ট মাষ্টার হবিবর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,’আমার অফিসের সব জায়গা থেকে পূর্বের সরকারের কর্মকান্ড সরানো হয়েছে। আপনি যা বলছেন তা সত্য নয়।’ পরে সাংবাদিক প্রমান দেখানোর চ্যালেঞ্জ করলে ফোন সংযোগ কেটে দেন।
জেলা শিশু একাডেমীর কর্মকর্তা মো. মঞ্জুরুল কাদির বলেন,’ আমার অগোচরে এটি হালনাগাদ করা হয়নি। আমি দুঃখিত, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
জেলা বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. রাশিদ আরিফ বলেন,’ব্যস্ততার কারণে এগুলো হালনাগাদ করা হয়নি। আমরা দুঃখিত,দ্রুত পরিবর্তন করছি।’
জেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মো.আলমগীর কবির প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন তাদের ওয়বেসাইটে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি নেই। পরে চ্যালেঞ্জ করা হলে বলেন, দ্রুত এটা সংশোধন করা হবে।’
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাহমুদুর রহমান বলেন,’এমনটি হবার কথা নয়। আমার অফিসের সব দপ্তরে নির্দেশনা দেয়া আছে। তারপরও আমি বিষয়টি দেখছি।’
জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন,’এরকমটা হওয়া মোটেও কাম্য নয়। আমি সর্বশেষ মিটিং এ সংক্রান— নির্দেশনা দিয়েছি । এরপরও পরিবর্তন না হওয়ায় আমি দ্রুত এ বিষয়ে মিটিং করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’