দেশে বেসরকারি বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগেও কোনো সুখবর নেই। জানা যায়, দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৭১ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকের উচ্চ সুদ হারও বিনিয়োগের অন্যতম বাধা। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। বেকারত্বের হার বাড়ছে। তাঁদের মতো নতুন বিনিয়োগকারীরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমছে অস্থিরতায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নীতি প্রয়োজন। ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগ কমার অন্যতম কারণ। সমপ্রতি হঠাৎ করেই সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ না করেই বিভিন্ন পণ্যে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, যা নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও উদ্বেগ জানিয়েছেন। ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) মনে করে, ভ্যাট, শুল্ক এবং অন্যান্য কর বৃদ্ধির সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত ভোক্তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার পাশাপাশি দেশে ব্যবসা পরিচালনার খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। এই পদক্ষেপ কর রাজস্ব প্রদানকারী এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকারী ব্যবসাগুলোর আর্থিক স্থিতিশীলতা ও কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। এদিকে, রাজস্ব আয় বড় ধরনের ঘাটতির পথে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা। আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর—সব খাতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায় কমেছে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ অন্য অনেক দেশের তুলনায়ই অনেক পিছিয়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ অনুকূলে নয়। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এখানে নীতির ঠিক নেই। কোনো সরকারই কথা দিয়ে কথা রাখে না। ইউটিলিটি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। যখন-তখন ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়। হয়রানি ও দুর্নীতি সীমাহীন। এসব কারণে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয় বিনিয়োগকারীদের। আমরা মনে করি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিনিয়োগ ও রাজস্ব খাতের স্বাভাবিক অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়টি। তাই এসব খাতে অতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।