রাজশাহীর তানোর উপজেলার এক কলেজে দুই বছরের অধিক সময় ধরে বিধিবহির্ভূতভাবে বহাল তবিয়তে চাকুরি করছেন এক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। পরিচালনা পর্ষদের কাছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি গোপন রেখে স্বপদে থেকে এমন চাকুরি করছেন তিনি। এছাড়া কলেজের শতবিঘা জমির ৩০ লাখ টাকা খাজনা বকেয়া রেখে কলেজ ফান্ডের বিপুল পরিমান অর্থ কৌশলে তসরুফ করছেন। তার এমন অনিয়ম-দূর্নীতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও দুর্নীতি দমন কমিশনার বরাবর ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ করেছেন শিক্ষানুরাগী স্থানীয় বাসিন্দা জিল্লুর রহমান ও তানোর উপজেলার শ্রমিক দলের সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম। অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানোর পৌর এলাকার তালন্দ ললিত মোহন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিষ্ণুপদ সরকার ২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
পরে ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের দোসর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মো. জসিম উদ্দীন মৃধা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পান। পরে তিনি কৌশলে ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য নিয়োগপত্র তৈরিও করে নেন। তার মেয়াদ এক বছর পূর্ণ হয়ে দুই বছর এক মাস অতিবাহিত হলেও অবৈধভাবে বহাল তবিয়তে তিনি। এছাড়া কলেজের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নিমিত্তে অভিভাবক শ্রেণির সদস্য নির্বাচনের জন্য চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী তফসিল মোতাবেক ভোটগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু নির্বাচন হয়নি। তবে, গোপনে বিধিবহির্ভূতভাবে নিজের পছন্দ মতো সদস্য নিয়ে অভিভাবক কমিটি গঠনে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। স্থানীয় শিক্ষানুরাগী জিল্লুর রহমান ও উপজেলার শ্রমিক দলের সদস্য সচিব শফিকুল ইসলামের দাবি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের দোসর ও সুবিধাভোগী কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে কলেজ ফান্ডের অর্ধকোটি টাকা তসরুফ করছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
কিন্তু কলেজের নামে শতাধিক বিঘা জমির ৩০ লাখ টাকা খাজনা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত। ফলে ওই কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল। অবিলম্বে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হোক বলে দাবি জানান তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, অত্র কলেজে অধ্যক্ষ ও দুই কর্মচারী নিয়োগে গত ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি বরাবর প্রার্থীদের আবেদন করতে বলা হয়। যার প্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ না করে কৌশলগত ভাবে স্বপদে থেকে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেন আওয়ামী লীগের দোসর নামে পরিচিতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।
যাহা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বিধিবহির্ভূত। সূত্র আরও জানায়, পরবর্তীতে অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হতে ওই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গোপনে আবারও গত বছরের ১৫ জুলাই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয়দের তোপের মুখেও এই নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এবিষয়ে অত্র কলেজের এডহক কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ সেলিম উদ্দিন কবিরাজ বলেন, গভার্নিং বডির অভিভাবক সদস্য নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। তবে, শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অনিয়ম ও কলেজের অর্থ তসরুফ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসংক্রান্ত ব্যাপারে শিঘ্রই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবার জন্য সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হবে। এব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মো. জসিম উদ্দীন মৃধা বলেন, শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন হয়ে গেছে। কিন্তু গভার্নিং বডির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের তারিখ অতিবাহিত হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে কি না তা সভাপতি সাহেব ভাল বলতে পারবেন। তবে, তিনি সব বিধি বিধান মতে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করেছেন।