গাছ কাটার আগে অনুমতি নিতে হবে: হাইকোর্টের রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
গাছ কাটার আগে অনুমতি নিতে হবে: হাইকোর্টের রায়

দেশের পরিবেশ রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে গাছ কাটার আগে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এ রায় দেন।

২০২৪ সালে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি (হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ) জনস্বার্থে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এতে তারা উল্লেখ করে, দেশে ক্রমাগত গাছ কাটার ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা মানবাধিকারের পরিপন্থী।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৭ মে আদালত রুল জারি করে জানতে চায়:
১. ঢাকার দুই সিটি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গাছ কাটা কেন মানবাধিকারের পরিপন্থী হবে না?
২. সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী লাগানো গাছ না কেটে তার সমমূল্যের অর্থ রোপণকারীদের কেন দেওয়া হবে না?
৩. গাছ কাটার অনুমতির জন্য কেন ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হবে না?

গাছ কাটার জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ
আদালত রায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে সাত দিনের মধ্যে গাছ কাটার অনুমতি প্রদানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। এই কমিটিতে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকসহ পরিবেশবিদরা থাকবেন।

এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও গাছ কাটার অনুমতির জন্য পৃথক কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা পর্যায়ে কমিটিতে থাকবেন:
জেলা প্রশাসক
জেলা পরিবেশ কর্মকর্তা
সরকারি কলেজের অধ্যাপক
সমাজকর্মী
পরিবেশবিদ
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক
জেলা সিভিল সার্জন

উপজেলা পর্যায়ে কমিটিতে থাকবেন:
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)
কলেজের অধ্যক্ষ
সমাজকর্মী
পরিবেশবাদী
সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা
এসি ল্যান্ড
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী

সামাজিক বনায়ন বিধিমালায় পরিবর্তন আনার নির্দেশ
রায়ে আরও বলা হয়, সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ অনুযায়ী রোপণ করা গাছ কাটা যাবে না। বরং ওই গাছের সমমূল্যের টাকা রোপণকারীকে প্রদান করতে হবে। সামাজিক বনায়নের গাছ সংরক্ষণে বিধিমালায় সংশোধনী আনতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ রায়
আদালত তার পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছে:
দেশে গাছের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম, ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে গাছ সংরক্ষণ আরও বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অযাচিতভাবে গাছ কাটা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ এবং মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।

আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ, সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মন্ডল ও অ্যাডভোকেট সেলিম রেজা। মনজিল মোরসেদ বলেন, “এই রায় দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এখন থেকে যত্রতত্র গাছ কাটা বন্ধ হবে এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আরও শক্তিশালী হবে।”

সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এই রায়ের ফলে:
পরিবেশ সংরক্ষণে সরকার আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।
দেশের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গাছ সংরক্ষণের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।
সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের আওতায় রোপিত গাছ সংরক্ষিত থাকবে এবং গাছ রোপণকারীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

এই রায় বাস্তবায়নে সরকারের তৎপরতা এখন দেখার বিষয়। তবে পরিবেশবিদরা মনে করছেন, এটি দেশের জন্য এক যুগান্তকারী রায় এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে