চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বাহেরচরে অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে কানা জহির ও কিবরিয়া গ্রুপের গোলাগুলিতে রিফাত ও রাসেল নামে ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এবং আইয়ুব আলী নামে আরও একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১১ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। ৩০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পরে মোহনেপুরের কাছাকাছি মেঘনা নদীতে গোলাগুলির এ ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাস্থল আব্দুল্লাপুর হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও আহতদের পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ হাসপাতালে নেয়া হলে বিষয়টি জানাজানি হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। থানা পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানায়, প্রভাব বিস্তারের জের ধরে মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে দ্বন্দ্বে কানা জহির ও কিবরিয়া গ্রুপের সদস্যরা ২টি করে মোট ৪টি স্পীডবোটযোগে একে অপরের প্রতি সশস্ত্র হামলায় মুখোমুখি হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় চাঁদপুরের মতলব উত্তরের দশানি গ্রামের রিফাত (২৯) ও ভাষানচর গ্রামের রাসেল (৩০)। গুলিবিদ্ধ আইয়ুব আলীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে একটি সূত্র বলছে, ডাকাত দলের সাথে নৌ পুলিশের গোলাগুলি ঘটেছে। যদিও নৌপুলিশের কেউ এখনো এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে কানা জহির এবং কিবরিয়া দুজনেই দুর্র্ধষ নৌ ডাকাত। মুন্সিগঞ্জ সদর থানার ওসি মোঃ সাইফুল বলেন, এটি চাঁদপুরের ঘটনা। গুলিবিদ্ধ আহতদের মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করে একজনকে ঢাকায় পাঠায়। আহত ব্যক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মেঘনা নদীর চাঁদপুরের মোহনপুর এলাকায় স্পিডবোটে ছিলেন রাসেল, রিফাত, আইয়ুব আলীসহ কয়েকজন। সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ কয়েকটি স্পিডবোট তাঁদের স্পিডবোটের সামনে আসে। তাৎক্ষণিক রাসেলদের স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় ওই দুর্বৃত্তরা। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই তিনজনকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রাত নয়টার দিকে তিনজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে দুজন মৃত অবস্থায় ছিলেন। একজন খুব গুরুতর আহত অবস্থায় ছিলেন। তাঁদের সবার শরীরে ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। এগুলো গুলি কি না, তা আপাতত বলা যাচ্ছে না। সুরতহাল শেষে বলা যাবে। আহত ব্যক্তিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি চাঁদপুরে ঘটেছে। তাঁরা সংবাদ পেয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এসে দুজনের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পেরেছেন। গুলিবিদ্ধ আরেকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে ঘটনাটি অবৈধ বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দুটি পক্ষ বালু উত্তোলন করে আসছে। দুটি পক্ষই নৌ ডাকাত হিসেবে পরিচিত। এ নিয়ে এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই এক পক্ষের লোকজন। ধারণা করা হচ্ছে, বালু উত্তোলনের দ্বন্দ্বের জের ধরেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান বলেন, ঘটনাটি চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ সীমানায় হয়েছে। কানা জহির ও কিবরিয়া গ্রুফের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। তারা ডাকাতি ও বালু মহলের সাথে জড়িত।