লালগালিচায় পা রেখে খাল খননকাজ উদ্বোধন করলেন তিন উপদেষ্টা

রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনে বাউনিয়া খালের সংস্কারকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। উদ্বোধনের সময় যে পথ দিয়ে তাঁরা খালের কাছে যান, সেখানে বিছানো ছিল লালগালিচা। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে এই উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কারকাজের সূচনা হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ছয়টি খালের সংস্কারের উদ্যোগ উপলক্ষে মিরপুর-১৩ নম্বর সেকশনের রূপসী প্রো-অ্যাকটিভ ভিলেজ আবাসিক এলাকার পাশে বাউনিয়া খালের পাড়ে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর তিন উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তারা বাউনিয়া খালের পাড়ে যান। সেখানে আগে থেকেই একটি ভাসমান খননযন্ত্র (ফ্লোটিং এক্সকাভেটর) রাখা ছিল। খালের পাড় থেকে খননযন্ত্রে পৌঁছানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী একটি পথ, যেখানে বিছানো ছিল লাল রঙের কার্পেট। উপদেষ্টারা সেই পথ ধরে হেঁটে খালের পানিতে থাকা খননযন্ত্রে ওঠেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে খাল খননকাজ শুরু করেন। খননযন্ত্র চালু করে প্রথম দফায় খাল থেকে মাটি তুলে পাড়ে ফেলা হয়।

উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টারা। এক সাংবাদিক পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানকে প্রশ্ন করেন, ‘আগে মেয়ররা এমন ধুমধাম করে উদ্বোধন করতেন, সেখানে লালগালিচা থাকত না। কিন্তু এবার উপদেষ্টারা খালেই নামলেন লালগালিচার ওপর দিয়ে।’ উত্তরে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান হাসতে হাসতে বলেন, ‘ওটা তো আমি খেয়াল করিনি, আপনি খেয়াল করেছেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা ঢাকা শহরের চারটি নদীকে দূষণমুক্ত করার কার্যক্রম শুরু করব। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, লন্ডন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া—সব দেশেই নদী পুনরুদ্ধারে ১০ বছরের মতো সময় লেগেছে। আমরা এমন একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করব, যাতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছরে কী কী করা হবে, তা নির্ধারণ করা থাকবে।’ তিনি জানান, ১৬ ফেব্রুয়ারি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি দল ঢাকায় আসবে এবং নেপাল, ইন্দোনেশিয়া ও চীনের নদী পুনরুদ্ধারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে মোট ১৯টি খাল সংস্কারের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর প্রথম ধাপে ছয়টি খালের সংস্কারকাজ শুরু করা হয়েছে। এসব খালের মধ্যে রয়েছে—ঢাকা উত্তর সিটির আওতায় বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি খাল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির আওতায় মান্ডা ও কালুনগর খাল। পর্যায়ক্রমে বাকি খালগুলোর সংস্কারকাজও বাস্তবায়ন করা হবে।

এই খাল পুনরুদ্ধার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে।