টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আমানুর রহমান খান রানা এবং তার তিন ভাইসহ ১০ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। তবে, এই মামলায় দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায়টি টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মাহমুদুল হাসান রোববার বিকেলে ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন মোহাম্মদ আলী এবং কবির হোসেন। মোহাম্মদ আলী ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন, কিন্তু জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি পলাতক রয়েছেন। কবির হোসেনও ২০১৪ সাল থেকে আত্মগোপনে আছেন।
ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার মূল ঘটনা ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি, যখন তিনি তার বাসার সামনে গুলি খেয়ে নিহত হন। হত্যার পর ফারুকের স্ত্রী নাহার আহমেদ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে, পরে তিনি অভিযোগ করেন যে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হওয়ায় ফারুককে হত্যার লক্ষ্য ছিল এবং টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী খান পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত।
মামলার তদন্তের সময়, মোহাম্মদ আলী এবং আনিসুল ইসলাম রাজা নামক দুজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তি দেন, যেখানে রানাদের চার ভাইয়ের নাম উঠে আসে। ২০১৬ সালে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর, ২০১7 সালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং দুই আসামি কারাগারে মারা যান।
এদিকে, সাবেক এমপি আমানুর রহমান খান রানা, তার তিন ভাইসহ অন্যান্য আসামিরা এই মামলায় খালাস পেয়েছেন, কারণ তাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। রানাদের আইনজীবী দাবি করেছেন, রাজনৈতিক কারণে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।
এছাড়া, মামলার তদন্ত চলাকালে জানা যায় যে, আমানুর রহমান খান রানা এবং তার ভাইয়েরা দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন এবং একাধিক মামলায় জড়িত থাকলেও কোনো বিচার হয়নি।
এই মামলার রায়ের পর, স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি একটি বড় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল হতে পারে, যেখানে ক্ষমতার দম্ভের কারণে সঠিক বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
ফারুক আহমেদের হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কখনোই বিচারের মুখোমুখি না হওয়ার কারণে, প্রশ্ন উঠেছে- এমন পরিস্থিতিতে আইন ও বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা কতটুকু নিশ্চিত করা সম্ভব?