ঢাকার মিরপুর-১৩ এলাকায় বাউনিয়া খালে খাল সংস্কারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা লাল গালিচা দিয়ে ভাসমান এক্সক্যাভেটরে ওঠার পর থেকেই বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়েছে, যার মাধ্যমে তারা বিষয়টির প্রকৃত কারণ তুলে ধরেছে।
রোববার সকালে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া—ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়টি খালের সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেখানে অতিথিরা খালে নামার জন্য লাল গালিচার ওপর দিয়ে হেঁটে ভাসমান এক্সক্যাভেটরে উঠেন।
এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন যে, কেন খালের সংস্কার কাজের উদ্বোধনে লাল গালিচা ব্যবহৃত হলো, যা সাধারণত বিশেষ অনুষ্ঠানে সম্মান প্রদর্শনের জন্য ব্যবহার করা হয়। সাংবাদিকরা যখন এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান, তখন ডিএনসিসির পক্ষ থেকে পরিষ্কার ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়।
ডিএনসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, "এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লাল গালিচা নয়। এটি শুধুমাত্র নিরাপত্তার স্বার্থে একটি ব্যবস্থা হিসেবে রাখা হয়েছে। ভাসমান এক্সক্যাভেটরটি স্থায়ী পন্টুনে স্থাপিত নয় এবং এক্সকাভেটরের ওঠার রাস্তা ছিল ঢালু ও কাদা মাটির। এমন পরিস্থিতিতে অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এবং চলাচলের পথটি দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেট সদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে।"
এছাড়া, ডিএনসিসি আরো জানায় যে, এই ব্যবস্থাটির মাধ্যমে কোনো ধরনের অপব্যয় বা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়নি। বরং, অতিথিদের নিরাপত্তা এবং সহজে এক্সকাভেটরে ওঠানামার জন্যই এটি করা হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টাও এ নিয়ে নিজেদের বক্তব্য প্রদান করেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "আমরা অতি দ্রুত সব সমস্যার সমাধান করতে পারবো না, তবে আমরা কিছু মডেল দিয়ে যেতে চাই, যাতে মানুষ দেখতে পারে যে কার্যকরভাবে কাজ করা সম্ভব।" তিনি আরো বলেন, ঢাকার 'ব্লু নেটওয়ার্ক' প্রকল্পের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমানোর আশা রয়েছে।
অন্যদিকে, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, "এখন আন্তঃমন্ত্রণালয় এক হয়ে কাজ করছে, যা আগে ছিল না। তবে, খাল খননের কাজ সহজ নয়, সময়সাপেক্ষ এবং এ ক্ষেত্রে নানা বাধা আসতে পারে।"
খাল সংস্কার ও পুনরুদ্ধারের কাজের লক্ষ্য হিসেবে ঢাকা শহরের উন্নয়ন এবং পরিবেশগত উন্নয়নকে সামনে রাখা হয়েছে। সিটি করপোরেশন আশা করছে যে, এই উদ্যোগের মাধ্যমে ঢাকার খাল ও জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার হবে এবং পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে।
এমতাবস্থায়, ডিএনসিসি ভবিষ্যতে এই ধরনের খাল সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নিরাপত্তার দিকটি অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে এবং কোনো ধরনের অপব্যয়ের পথে না গিয়ে সবকিছু স্বচ্ছতার সাথে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে।