রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সম্মিলিত সনাতনি জাগরণ জোটের মুখপাত্র চন্দন কুমার ধর ওরফে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান ও বিচারপতি মো. আলী রেজার হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। রুলে বলা হয়েছে, চিন্ময় দাসকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সরকারকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আট দফা দাবিতে আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন চিন্ময় দাস। তার নেতৃত্বে ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ৩১ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে বিএনপি নেতা ফিরোজ খান রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় চিন্ময়সহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।
তবে মামলার কিছুদিন পরই বিএনপি থেকে ফিরোজ খানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে চট্টগ্রামে নেওয়া হয় এবং ২৬ নভেম্বর আদালতে হাজির করা হলে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম।
চিন্ময়ের জামিন আবেদন নামঞ্জুরের পর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তার অনুসারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত চলা এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এতে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন এবং ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৩৭ জন আহত হন।
জামিন নামঞ্জুরের আদেশের বিরুদ্ধে চিন্ময় দাস পুনরায় উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ সাইফুল ইসলাম তার আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন চিন্ময় দাস।
মঙ্গলবার হাইকোর্টে তার জামিন আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে চিন্ময়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য ও প্রবীর রঞ্জন হালদার। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদুর রউফ।
সরকারের জবাব পাওয়ার পর হাইকোর্টের বেঞ্চ এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ মামলার গুরুত্ব তুলে ধরে জামিন না দেওয়ার যুক্তি উপস্থাপন করতে পারে। অন্যদিকে, চিন্ময়ের পক্ষ থেকে জামিনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হবে।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন নিয়ে আগামী দিনে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে।