এলাকায় তিনি কবি ছাইফুল নামেই পরিচিত। ধুপের মতো সুগন্ধ ছড়িয়ে জ্ঞানের আলো বিকিরনের আশায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ধুপশালা গ্রন্থাগার’। সাড়ে তিন দশক ধরে এ গ্রন্থাগার নিভৃত পল্লীতে জ্ঞান বিতরণ করছে। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত লোকেরপাড়া গ্রামকে সারা জেলায় সুপরিচিত করেছে গ্রামের এ পাঠাগারটি। ছাইফুল ইসলাম ছোট একটি চাকরি করতেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কবি পাগল মন তাকে বেশি দিন সেখানে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। বাড়ি ফিরে নিজ খরচে প্রতিষ্ঠা করেন ধূপশালা সাহিত্য সংঘ ও পাঠাগার। এর সঙ্গেই কেটে যাচ্ছে জীবনের চার দশক। প্রতিষ্ঠানকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন তিনি। লেখক জীবনে চারটি উপন্যাস, একটি কাব্য ও একটি গল্পের বই প্রকাশ পেয়েছে। আরো কয়েকটি পাণ্ডুলিপি প্রকাশনা সংস্থায় জমা রয়েছে। নিজের সম্পাদনায় লিটল ম্যাগাজিন 'ধূপশালা মাসিক সাহিত্য সাময়িকী' টানা তিন দশক ধরে প্রকাশ করে আসছেন। প্রতি বছর সুযোগ পেলে পাঠাগার মিলনায়তনে কবি সম্মেলন করেন। দেশের পরিচিত ও নবীন লেখকরা আসেন। বসে কবিতা পাঠের আসর। পাঠাগারকে কেন্দ্র করে খুদে লেখকদের নিয়ে একটি বলয় গড়ে তুলেছেন তিনি। লোকেরপাড়া গ্রামের এনজিও কর্মী নজরুল ইসলাম জানান, বাল্যকাল থেকে তিনি দেখে এসেছেন এ সাহিত্য সংঘ ও পাঠাগার এলাকায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষামোদী ও গবেষকরা এসে পড়ালেখা করেন। জীবনের উপার্জনের সকল আয় এ পাঠাগার আর সাহিত্য সংঘের পেছনে ব্যয় করেছেন। নিজের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো নয়। বয়সও হয়েছে তবুও তিনি কবিতা আর পাঠাগার নিয়ে মগ্ন থাকেন। ভূঞাপুর উপজেলার লোকমান ফকির গার্লস কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) এবং ছড়াকার গোলাম রব্বানী রতন জানান, ছাইফুল ইসলাম স্বভাবজাত কবি। বাল্য থেকেই সাহিত্য চর্চা করেন। কবিতাকে হৃদয় থেকে লালন করেন। জলসা ঘরসহ অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। নবীন লেখকদের তিনি সাহিত্যচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দেন। উপজেলার অ্যাম্বিশন মডেল স্কুলের শিক্ষক এবং তরুণ লেখক নাজমুল অরণ্য জানান, ছাইফুল ইসলামের পাঠাগারে ৬ সহস্রাধিক গ্রন্থ রয়েছে। এর বেশ কিছু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ। ২০১১ সালে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর ধূপশালা সাহিত্য সংঘ ও পাঠাগারকে মানসম্মত পাঠাগার হিসেবে তালিকাভুক্তির সনদ দেয়। এর আগে ২০০২ সালে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ধূপশালাকে নিবন্ধীকরণ প্রত্যয়নপত্র দেন। ছাইফুল ইসলাম জানান, হাজারো প্রযুক্তির ছড়াছড়ি সত্ত্বেও মানবিক ও মননশীল মানুষ তৈরিতে বইয়ের বিকল্প নেই। সরস চিন্তার মানুষ তৈরির জন্যই তিনি সাহিত্য সংঘ ও পাঠাগার স্থাপন করেছেন। কিন্তু শঙ্কার বিষয় হলো দিন দিন পাঠকের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। নবীন প্রজন্ম মানেই মোবাইল প্রজন্ম। মাত্রাতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভরতা মানবিক মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কিনা সেটি ভাবনার বিষয়।