গুচ্ছভর্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

এফএনএস এক্সক্লুসিভ : | প্রকাশ: ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম : | আপডেট: ১ মার্চ, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
গুচ্ছভর্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

আর্থিক লাভের আশায় গুচ্ছভর্তি থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে সঙ্কটে পড়তে পারে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি। এবার আগেভাগেই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ঘোষণা দেয় এবং সে অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম চলছে। তাদের দেখাদেখি এখন পর্যন্ত গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে গেছে সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছের ৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ও। আরো কয়েকটি বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। তাছাড়া পুরোটাই ভেঙে গেছে প্রকৌশল গুচ্ছ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা উপদেষ্টার চিঠি ও নির্দেশনা আমলেই নিচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট দূর করতে ‘গুচ্ছ’ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা হয়েছিলো। কারণ আগে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিতো। আর ওই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের দূরদূরান্তে গিয়ে একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হতো। তাতে ভোগান্তি ও খরচ বাড়তো। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উদ্যোগে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে প্রথম গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়। তাতে কৃষি ও কৃষি শিক্ষাপ্রধান সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় অংশ নেয়। গুচ্ছ পদ্ধীথথৈ শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পরীক্ষা দিতে হয় না। একটি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী তার যোগ্যতা ও পছন্দ অনুযায়ী গুচ্ছে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করায় সফলতা পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে একইভাবে তিনটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় মিলে প্রকৌশল গুচ্ছ এবং ২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে জিএসটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়।

সূত্র জানায়, গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে যোগ দিলেও শুরু থেকেই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যেতে চায়। এর মধ্যে ছিলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি), ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি), গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ বলেছিলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে নিয়ে আসতে হবে। নইলে তারা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসেনি। পাশাপাশি বুয়েটকে গুচ্ছে আসার প্রস্তাব দেয়া হলে তাদের দাবি ছিলো প্রতি বছর বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম থাকতে হবে। কিন্তু তা আবার অন্যরা মানতে নারাজ। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে আসেনি দেখে এই পদ্ধতিতে না আসা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আর ইচ্ছা দেখায়নি।

সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেশের সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি ‘একক’ ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। নতুন এই নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার জন্য ‘ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)’ নামে পৃথক একটি কর্তৃপক্ষ গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। ইউজিসি ‘একক ভর্তি’ পরীক্ষার একটি খসড়া অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমতির জন্য পাঠানো হলেও পরবর্তীতে তা ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্বে আটকে যায়। ইউজিসিকে ফের খসড়াটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করে পাঠানোর জন্য ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর চিঠি দেয়া হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু রাজনৈতিক পালা বদলের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই আর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকতে রাজি নয়। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াই আগামী ২৫ এপ্রিল গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে।

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে এখন পর্যন্ত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে গেছে। সেগুলো হলো- জবি, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি), হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) ও বশেমুরবিপ্রবি। এছাড়া গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও এখনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেয়নি ববি ও বশেমুরবিপ্রবি। গত ২১ জানুয়ারি ববি এবং ২৬ জানুয়ারি বশেমুরবিপ্রবি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে যায়। আর প্রকৌশল গুচ্ছে সবার আগে বের হয়ে যায় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। তারপর বেরিয়ে যায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। মূলত কুয়েট সবার আগে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে ১৭ নভেম্বর ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত ১১ জানুয়ারি কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখতে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার ইউজিসি ভবন ঘেরাও করেছে। ইউজিসি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতি বহালের সুপারিশ করবে বলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। শিক্ষা উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তার থোড়াই কেয়ার করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। মূলত আর্থিক লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ ভর্তি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। কারণ ভর্তি পরীক্ষার ফরম বিক্রি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক টাকা আয় হয়। এমন আয়ের দিক থেকে জবি ও বশেমুরবিপ্রবিও ওপরের সারিতে রয়েছে। যে কারণে গুচ্ছ ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আগ্রহী নয়। তাছাড়া গুচ্ছে না থাকার পেছনে বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পদ্ধতিতে যুক্ত না হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির বাধাও অন্যতম কারণ। গুচ্ছ পদ্ধতিতে এই পর্যন্ত যতবার পরীক্ষা হয়েছে, কোনো সময়ই এর আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়া হয়নি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চরম অসন্তোষ ছিল। 

এ প্রসঙ্গে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আলাদা করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মূলত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চাওয়ার কারণেই একাডেমিক কাউন্সিলে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। গুচ্ছ নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ জানান, ছাত্রদের কল্যাণের কথা না ভেবে কেউ যদি নিজের দিকটা ভাবে, তা দুঃখজনক। ছাত্রদের কারণেই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপাচার্য, কর্তৃপক্ষ। এখন সরকার তাদের মতো করে এটি বিবেচনা করবে এবং সিদ্ধান্ত নেবে।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে