আন্তর্বতী সরকারের অপেক্ষায় না থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধান সংস্কারে ‘সমঝোতা পরিষদ’ গড়ার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম। উপর দায়িত্ব চাপিয়ে নিষ্ক্রিয় থাকার উপায় নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ উদ্যোগে সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবার ঐতিহাসিক দায়িত্ব উপস্থিত হয়েছে। সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। সেই প্রয়োজনীয় আলাপ আজকে আমরা শুরু করলাম ক্রমাগত নানা অংশীজনদের সাথে দেশব্যাপী সমঝোতার আলাপ তুলে ধরে সংবিধান সংস্কারের টেকসই ও বাস্তবমুখী পথ নির্ধারণ করতে পারবো। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘সমঝোতা ব্যতিত সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি’ শীর্ষক সমঝোতা সংলাপে হাসনাত কাইয়ূম এসব কথা বলেন। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই ৩৬ ফোরাম অপরাজেয় বাংলা সমঝোতা সংলাপের আয়োজন করে। সমঝোতা সংলাপ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর জেলা সমন্বয়ক অধ্যাপক চিনু কবিরের সভাপতিত্বে এবং বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রায়হান কবীরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জুলাই ৩৬ ফোরাম অপরাজেয় বাংলার আহবায়ক নাজীর শাহীন, রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর জেলা সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, জেএসডি (জাসদ) রংপুর মহানগর সদস্য সচিব এবিএম মশিউর রহমান, নাগরিক ঐক্যের রংপুর জেলা আহ্বায়ক মাহি আজাদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ফরিদুল ইসলাম, কনক রহমান, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজিব, জেলা কমিটির সংগঠক আশিকুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ‘টেকসই সংস্কারের একমাত্র পথ; রাজনৈতিক সমঝোতা’ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন। প্রবন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারের অপেক্ষায় না থেকে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত হয়ে সমঝোতা পরিষদ গঠন করে সংবিধান সংস্কারের ব্যাপ্তি ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়। একই সাথে প্রচারণার মাধ্যমে সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। রাজনৈতিক সমঝোতার এ প্রক্রিয়াকে সহজ করতে অন্তর্বর্তী সরকারের ঐক্য কমিশনকে সেক্রেটারিয়েট হিসেবে কাজ করবার কথাও বলা হয় মূল প্রবন্ধে। বিএনপির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, রাজনৈতিক মহলে সংস্কার নিয়ে ঐক্য করতে হবে। সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে সমঝোতা পরিষদ তৈরির প্রস্তাবে বিএনপির নৈতিক সম্মতি রয়েছে। কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতেই। বিএনপির ৩১ দফার ভিত্তিতে সংস্কারের কাজ করা যেতে পারে বলে আমরা বলেছি। এবি পার্টির রংপুর মহানগর শাখার আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন করতে হবে। সমঝোতায় আসতে ছোট বড় সকল শক্তির ক্ষমতার ভারসাম্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে। গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান বলেন, জাতির জীবনে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বার বার আসে না। অতীত ইতিহাস থেকে দলগুলোকে শিক্ষা নিতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সৃষ্টি করতে হবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, জুলাই বিপ্লবে শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা সামসি আরা জামান কলি, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, মাপা রংপুর এর প্রধান নির্বাহী অ্যডভোকেট মুনির চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর নাসিমা আমিন, দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, মোবাইল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এদিকে সমঝোতা সংলাপ অনুষ্ঠানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের দোসররা সামনের সারিতে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ তুলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগর আহবায়ক ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতি। তিনি ফ্যাসিজম থেকে বেরিয়ে এসে দেশের স্বার্থে রাজনীতি করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন। পরে আওয়ামী লীগের দোসরদের উপস্থিতি থাকায় দুঃখ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।