চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন, ২০২৫) জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করা হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতি। এবার মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ সংরক্ষণ, এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। তবে ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা সংকোচনমূলক নীতি বাস্তবায়নে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন মুদ্রানীতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তৈরি করা হয়েছে। গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত কয়েক মাসের উর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। জানুয়ারি মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও তা এখনো ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে একমাত্র সুদহার বাড়ানো যথেষ্ট নয়, বরং বাজার ব্যবস্থাপনা এবং সিন্ডিকেট ভাঙার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, এবারের নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। তিনি বলেন, "যেহেতু দেশের অর্থনীতি বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই, তাই সুদের হার বাড়ানোর চেয়ে বাজারে তারল্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ এবং বিনিয়োগ পরিবেশ স্থিতিশীল রাখার দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।"
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, সুদের হার বাড়ালে উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতি আরও উসকে উঠবে। তাই ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি প্রয়োজন। ফিনান্সিয়াল সেক্টরের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন এবং ফলাফল নিয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
নতুন মুদ্রানীতিতে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হারকে স্থিতিশীল রাখতে নতুন কৌশল প্রয়োগের ইঙ্গিত মিলেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ডলারের দাম ১২২ টাকার মধ্যে সীমিত রাখতে এবং রিজার্ভ সংরক্ষণে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বর্তমান সংকটের সময়ে শুধু মুদ্রানীতির মাধ্যমেই পরিস্থিতি সমাধান সম্ভব নয়। এর জন্য অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগ এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তারা বলছেন, "বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে এবং উৎপাদন খরচ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।"
উল্লেখ্য, গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, কিন্তু তাতেও বাজারে সুদের হার কমাতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা এখনও ঋণ গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, যা বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।