রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। পুকুর খননের মাটি বহনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ টক্টর, নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের শুকতি বিল, মৌগাছি ইউনিয়নের হরিফলা, গোপালপুর, বাকশিমইল ইউনিয়নের কালিগ্রাম-পত্রপুর, ধুরইল ইউনিয়নের বাদেজুল, ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের আতানারায়নপু-ঘাসিগ্রাম বিলে ফসলি জমিতে নতুন করে চলছে পুকুর খননের মহোৎসব। কেশরহাট পৌরসভার ফুলশো এলাকায় টক্টর দিয়ে আলাদাভাবে মাটি বহন করা হচ্ছে। খননকারী পুকুরের মাটি অবৈধ হাইড্রোলিক ট্রাক্টরে বহন করে চলাচল করায় রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কসহ গ্রামীণ সড়ক গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবৈধভাবে ট্রক্টর-ট্রলি দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত মাটি বহনের কারণে গ্রামীণ সড়ক পথ গুলো ধ্বংসের মুখে পড়েছে। এছাড়া হাইড্রোলিক ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে জীবনও দিতে হচ্ছে পথচারীকে। দিনরাত চলে ট্রাক্টরে মাটি বহন। এসব যেন দেখার কেউ নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন স্থানে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে খালি জায়গা ভরাট, অবৈধ পুকুর খননের মাটি বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই প্রতিদিন মাটি বোঝাই বহু ট্রাক্টর বা ট্রলি সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। টক্টর ট্রলি গুলোর বেপরোয়া চলাচলে ধুলাবালু উড়ে ও হাইড্রোলিক হর্নে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে গাড়িচালক ও মালিকদের রোষানলে পড়তে হচ্ছে। এলাকায় রাতে ও দিনে অবৈধ পুকুর খননের মাটি হাইড্রোলিক টক্টর-ট্রলির মাধ্যমের বহন করায় সড়ক বেহাল হয়ে গেছে। এতে সড়কের পিচ ও ইটের সলিংয়ের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে খানা খন্দ। বেহাল সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। মোহনপুর উপজেলার হাতে গনা কয়েকজন ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ টক্টর ভাড়া করে এনে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হাইড্রোলিক ট্রাক্টর প্রতিনিয়ত দাপিয়ে চলছে প্রায় প্রতিটি রাস্তায়। কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সের দরকার না হওয়ায় অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়েই চলছে ড্রাইভিংসহ পরিচালনার কাজ। কেশরহাট পৌরসভা এলাকার একজন গৃহবধূ জানান, রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়ায় সব সময় শিশুদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। ওরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অবৈধ পুকুর খনন, সড়ক ধ্বংসকারী মাটি বহনে অবৈধ ট্রাক্টর বন্ধ করে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন হাইড্রোলিক ট্রাক্টরের মালিক জানান, আমরা প্রতি গাড়ি মাটি দূরত্ব ভেদে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করি। রাস্তার ক্ষতি হলেও তো কোনো উপায় নেই। যেহেতু গাড়ী গুলো অবৈধ তাই প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই টক্টর চালাতে হয়। আপনরা লেখালেখি করলে বেশি টাকা দিতে হয়। তবে বন্ধ করতে পারবেন না। অবৈধ পুকুর খননকারীরা বলেন, মূলত উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে কাজ করা হচ্ছে। এসব সেক্টর মানেজ করে মোহনপুর থানার পুলিশের সহযোগিতায় কথিত সংবাদ কর্মী। মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, পুকুর খনন বন্ধের জন্য অভিযান প্রতিনিয়ত চালনো হচ্ছে। অবৈধ হাইড্রোলিক টক্টর রাস্তায় চলছে। এগুলো যেহেতু অবৈধ। পুকুর খননকারী ও অবৈধ টক্টর চলাচল বিষয়ে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোহনপুর উপজেলা প্রকৌশলী মোছা: নুরনাহার বলেন, সড়কের অবকাঠামো না জেনে অবৈধ ওই গাড়ির মালিকরা তাদের ইচ্ছেমতো মাটি পরিবহণ করছেন। যার করণে সংস্কার বা নির্মাণ করায় বছর শেষ না হতেই সড়ক গুলো আগের রূপ ধারণ করছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।