খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগ ও যোগদান রহস্যজনক

এফএনএস (এম এম মফিজুর রহমান; মোল্লাহাট, বাগেরহাট) : | প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম
খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদত্যাগ ও যোগদান রহস্যজনক

খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতাল (শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল)'র প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান দীর্ঘদিন যাবৎ একই স্থানে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। একটা সময় তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল এ দুইটি প্রতিষ্ঠানের একই পদে দায়িত্ব পালন করতেন । তার কর্মকাণ্ডে অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারীরা অতিষ্ঠ থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগসাজোশ থাকায় তার বিরুদ্ধে  ভয়ে কেউ কখনো মুখ খোলেনি। বিগত ৫ই আগস্ট,২০২৪ ইং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অভ্যুত্থানের পর থেকে দুর্নীতিবাজদের অপসারণ শুরু হয়। শুরু হয় প্রত্যেকটি সেক্টরে সংস্কারের কাজ। তারই প্রেক্ষাপটে কোটি কোটি টাকা  দুর্নীতির দায়ে  বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের তোপের মুখে গত ৮সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান। ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে ছাত্রদের চাপে পড়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তথ্যসূত্রে প্রকাশ, তার উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিসমূহ হল: টেন্ডার সংক্রান্ত অনিয়ম, প্রভাব খাটিয়ে নিজের আত্মীয়দেরকে আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে নিয়োগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে  আউটসোর্সিং কর্মচারীদের  অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও অবৈধভাবে হাসপাতালের ওষুধ বিক্রি সহ নানা দুর্নীতির সত্যতা পায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা। ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে উক্ত হাসপাতালের পরিচালক ডা: আবু শাহিন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামানের দুর্নীতির বিষয় ও  তার পদত্যাগের বিষয় অকপটে স্বীকার করেন। তার সকল কর্মকান্ডের দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়টিও দৃশ্যমান ও সুস্পষ্ট হয় বৈষম্য বিরোধী  ছাত্রদের কাছে, তথা উপস্থিত সকল গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনসাধারণের কাছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান  পদত্যাগ পত্রে  স্বাক্ষর এবং তার দুর্নীতির বিষয়  প্রমাণিত হওয়ায়  টিভি ক্যামেরার সামনে  স্বাক্ষর করা পদত্যাগ পত্রটি ছাত্রদের কাছে হস্তান্তর করেন ।বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায়  জনসাধারণের মনে স্বস্তি ফিরে আসে। তখনই যৌথ বাহিনীর গাড়িতে তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় । পরবর্তীতে তৃতীয় দিনে যেভাবে হোক ম্যানেজ করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসেন এবং পূর্বের প্রভাব আবার বিস্তার করে  উক্ত পদে যোগদান  করেন ওই কর্মকর্তা। পদত্যাগকৃত সরকারি কর্মকর্তা পুনরায়  কিভাবে যোগদান করেন এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহের জাল তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা  হসপিটাল থেকে দুর্নীতি করে বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তিনি তার বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ ক্রয় করে গোপন রেখেছেন, যাতে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তেমন কিছু খুঁজে পাবে না বলে একটি মহল জানিয়েছে । বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে রাজধানী ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট ক্রয় করেছেন বলে জানা যায়। তিনি নিজ গ্রাম তেরখাদা উপজেলার মোকামপুরের আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অনেক জমি/সম্পত্তি ক্রয় করেছেন। মোকামপুর বাজারে সরকারি খাস জমি জবরদখল করে অর্ধশতাধিক দোকান তৈরি ও ভাড়া দিয়েছেন বলে এলাকাবাসী ঞসূত্রে জানা যায়। তার গ্রামের বাড়িতে তিনতলা ভবন করেন। বাড়ির সামনে সরকারি খাল দখল করে পাকা কাচারি ঘর নির্মাণ এবং ভোগ দখল করেছেন বলেও জানা যায় । তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ার  অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি মামলাও দায়ের ছিলো,

কিন্তু কৌশলে সেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে সুত্রে জানা যায়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামানের দুর্নীতি অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতা শুধু যে হসপিটালে সীমাবদ্ধ তা নয়, তার ব্যক্তি জীবনেও এর প্রভাব পড়েছে। নিজের ২৯ বছরের সংসারজীবনের সহধর্মিনী, ১টি ২২ বছরের কন্যাসন্তান ও ১টি ১৭ বছরের পুত্রসন্তানকে রেখে পরকীয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন বলেও সুনিশ্চিত ভাবে পরিবার সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে  পরিচালক ডা: আবু শাহিনের সাথে কথা বললে তিনি আমাদেরকে জানান ছাত্ররা দুর্নীতির অভিযোগে ওয়াহিদুজ্জামানকে হাতেনাতে ধরায়  স্বেচ্ছায়  পদত্যাগ করেছেন। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েক ব্যক্তি বলছেন, তার পুনরায় যোগদানের বিষয়টি আসলে রহস্যজনক। সে মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে  কৌশলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কিংবা অন্য কোন উপায়ে পুনরায় স্বপদে আসিন হন। এ বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, আমার বিরুদ্ধে এ সকল একটি ষড়যন্ত্র, যে অভিযোগগুলো আমার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে এগুলো আসলে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা, আমি যদি কোন দুর্নীতি করতাম তাহলে হয়তো এতদিন অনেক কিছুই খুঁজে পেতো। পদত্যাগের বিষয়টি তখন ছাত্রদের চাপে পড়ে করে ছিলাম এবং তারাই পরবর্তীতে আমাকে যোগদান করায়  দিয়েছে। আর আসলে আমাদের চাকরি তো পদত্যাগের বিষয় না এটা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে রিজাইনের একটি ব্যাপার।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে