পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর চাকরিচ্যুত হওয়া বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্যরা ছয় দফা দাবিতে আজ সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। বিডিআর কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে চাকরিচ্যুত সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরাও অংশ নিয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের দাবি, তারা অন্যায়ভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না করে নির্দোষদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কর্মসূচি চলাকালে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে 'বিজিবি না বিডিআর, বিডিআর বিডিআর', 'দেশপ্রেমিক বিডিআর, সীমান্তে যাবে আরেকবার', 'বিডিআরের ঠিকানা, পিলখানা পিলখানা' ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
২. জেলবন্দিদের মুক্তি: ইতোমধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া বিডিআর সদস্যদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে।
৩. স্বাধীন তদন্ত কমিশন: পিলখানা হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত 'ব্যতীত' শব্দ এবং কার্যপরিধি ২-এর (ঙ) ধারা বাদ দিতে হবে। অন্যায়ভাবে দণ্ডিত নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ ও ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৪. হত্যাকারীদের বিচার: পিলখানায় শহীদ হওয়া ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ বিডিআর সদস্যসহ মোট ৭৪ জনের হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। জেলে মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৫. বিডিআর নাম পুনর্বহাল: স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নামটি পুনর্বহাল করতে হবে, বিজিবি নাম বাতিল করতে হবে।
৬. জাতীয় দিবস ঘোষণা: পিলখানার হত্যাকাণ্ডে শহীদদের স্মরণে একটি জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং শহীদ পরিবারের সর্বপ্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী এক সদস্য বিএম কামরুজ্জামান বলেন, "তৎকালীন সরকার আমাদের ষড়যন্ত্রের শিকার করেছে। আমরা নির্দোষ হয়েও শাস্তি পাচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।" অন্য এক অংশগ্রহণকারী, চাকরিচ্যুত সদস্যের মেয়ে, কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমার বাবাকে বিনা অপরাধে ফাঁসানো হয়েছে। আমি আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।"
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর জানান, "বিডিআর সদস্যরা শান্তিপূর্ণভাবে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।"
কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই লাগাতার আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকরা।