সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৫:০৪ পিএম | প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা ১৬ হাজার ৪২৯টি গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এগুলোর মধ্যে এক হাজার ২১৪টি মামলা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। এর মধ্যে ৫৩টি মামলা প্রত্যাহারের গেজেট আগামী দু-এক দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে।  

আইন উপদেষ্টা জানান, ১৬ হাজার ৪২৯টি মামলার তালিকা করা হয়েছে। প্রতিটি মামলার রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে যে, এগুলো প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা কিনা, নাকি ব্যক্তিগত বিরোধ বা কারচুপির মাধ্যমে দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, "ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যক্তির হত্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব নয়। প্রতিটি মামলার রেকর্ড যাচাই করে নিশ্চিত হতে হচ্ছে।"  

মামলা প্রত্যাহারের প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, "স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করছি। তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।"  

আইন উপদেষ্টা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কথা বলা বা লেখালেখির কারণে (স্পিচ অফেন্স) দায়ের করা ৩৯৬টি সাইবার সিকিউরিটি মামলার মধ্যে ৩৩২টি ইতোমধ্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে। ৬১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং আগামী ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে এগুলোও প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, "ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হওয়ার আগেই সাইবার সিকিউরিটি আদালতে স্পিচ অফেন্স সংক্রান্ত কোনো মামলা থাকবে না। তবে তিনটি মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে না, কারণ উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেগুলো স্থগিত রয়েছে।"  

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোগান্তি লাঘবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "২০১৫ সালের বিধিমালা অনুযায়ী, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে হলে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু অনেক প্রবাসীর সন্তানরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না, ফলে তাদের জন্য জটিলতা তৈরি হতো। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, এখন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে নো ভিসা রিকোয়ার স্টিকার থাকলে, জন্ম সনদ বা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।"  

চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ তিন-চারটি মামলার রায় পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, "জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩০০টির বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি মামলার তদন্ত চলছে এবং চলতি মাসে চারটি মামলার তদন্ত শেষ হবে। এরপর আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হবে এবং আগামী অক্টোবরের মধ্যে তিন-চারটি মামলার রায় আশা করা যায়।"  

তিনি আরও বলেন, "আওয়ামী লীগের আমলে আইসিটি আদালতে একটি মামলার বিচার শেষ হতে গড়ে আড়াই বছর সময় লাগত। কিন্তু আমাদের প্রসিকিউশন টিমের কার্যকর তৎপরতার কারণে এক বছরের মধ্যে রায় আশা করা যাচ্ছে।"  

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, "গায়েবি মামলা হলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যে দায়ের করা মামলা। এগুলো প্রকৃতপক্ষে হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত।"  

আইন উপদেষ্টার এই ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেকেই আশা করছেন, মামলা প্রত্যাহারের এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক সংঘাত কমিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হবে।  
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে