নওগাঁর পত্নীতলায় নজিপুর পৌরসদর বড় চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মিত ও দুর্নীতিবাজ সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তারের পোস্টিং এর খবরে ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা উপজেলা চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছে। বুধবার বেলা ১১টায় তাঁরা মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে এবং উক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয়ে পোস্টিং দেওয়া হলে তাঁরা সকল অভিভাবক বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠানো থেকে বিরত থাকবেন বলেও হুশিয়ারী প্রদান করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ইতিপূর্বে নজিপুর পৌর এলাকার হরিরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতেন না এবং সহকর্মীদের নানাভাবে মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি করতেন। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তারা রাজনৈতিক দাপটের কারণে তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারতেন না। তার খারাপ আচরণের কারণে পুরো শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা আতংকে থাকতেন। ০৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর হরিরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা শিক্ষক জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করলে তিনি চিকিৎসাজনিত ছুটি নেন এবং বিদ্যালয় গমন থেকে বিরত থাকেন। সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকদের অনলাইন বদলী কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষক জেসমিন আক্তার বড় চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পোস্টিং এর জন্য আবেদন করেন। হরিরামপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বিতাড়িত অনিয়মিত ও দুর্নীতিবাজ শিক্ষক জেসমিন আক্তার বড় চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসছেন এমন খবরে বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং বুধবার উপজেলা চত্বরে সমবেত হয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। প্রতিবাদ সভা শেষে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ জমা দেন। এ সময় তাঁরা দুর্ণীতিবাজ শিক্ষক জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগানদেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে আসা অভিভাবক সুমন বলেন, শিক্ষক জেসমিন আক্তার বিগত সময়ে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তার স্বভাব ভালো না। সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বাজে ব্যবহার করতেন। শিক্ষক জেসমিনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বিষয়ে আমরা যা জানতে পেরেছি তাতে এই শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলে আমাদের শিশুদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হবে। তাই এই দুর্নীতিবাজ শিক্ষককে আমরা কিছুতেই বিদ্যালয়ে আসতে দিবো না। প্রয়োজনে সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে বিদ্যালয় অচল করে দেওয়া হবে।বড় চাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বিদ্যালয়টি পৌরসভার শেষ প্রান্তে ও দরিদ্র পীড়িত এলাকায় অবস্থিত। এখানকার অভিভাবকরা সন্তানদের পড়ালেখার জন্য শিক্ষকদের উপর পুরোদস্তুর নির্ভরশীল। নিজেরা শিক্ষিত না হওয়ায় তাঁরা সন্তানদের পড়ালেখায় সাপোর্ট করতে পারেনা। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা কম থাকায় আমরা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছি। বিদ্যালয়ে আমিসহ মোট ৪জন স্টাফ আছি। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আমার চাওয়া হবে চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য বিদ্যালয়ে আন্তরিক একজন শিক্ষককে পোস্টিং দেওয়া হোক। শিক্ষক জেসমিন আক্তার এর আমার বিদ্যালয়ে আসার বিষয়ে শুনেছি। কিন্তু আমি এখনও অফিসিয়াল কোন কাগজ হাতে পাইনি। তবে অভিভাবকদের চাহিদা পাশ কাটিয়ে শিক্ষক জেসমিন আক্তারকে বিদ্যালয়ে পোস্টিং দেওয়া হলে বিদ্যালয়ে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৃষিত কুমার চৌধুরী বলেন, অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট গিয়ে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি আমি শুনেছি। অনলাইনে বদলী কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় এখানে আমাদের কিছু করণীয় থাকেনা। পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, অনলাইনে বদলীর কারণে এখানে আমাদের কিছু করার নেই। আগের বিদ্যালয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের কিছু অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে ওই শিক্ষককে নিতে চাচ্ছে না। বিষয়টি শিক্ষা বিভাগকে জানানো হয়েছে।