সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন অফিসের কর্মচারী

এফএনএস (আঃ লতিফ মোড়ল; ডুমুরিয়া, খুলনা) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৩:৩৫ এএম
সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করে দিলেন অফিসের কর্মচারী

ভাইরাস আক্রান্ত শিরিশ গাছের ডাল বিক্রির গুজবে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে বিভিন্ন অঞ্চলের অঞ্চলের মানুষ। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গাছ ও পরিবেশ। চড়া দামে চোরাকারবারীদের কাছে ভাইরাস আক্রান্ত গাছের ডাল বিক্রির গুজবে এ অঞ্চলের নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিনাতিপাত করছেন রোগাক্রান্ত শিরিশ গাছের ডাল সংগ্রহ করতে। ব্যক্তি মালিকানার গাছ বিক্রি হলেও এবার খোদ ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসের গাছও রেহাই পায়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের এক কর্মচারী চড়াদামে বিক্রি করেছেন শিরিশ গাছের ডাল।  জানা গেছে, খুলনা জেলার কতিপয় চোরকারবারি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিরিশ গাছের গাছের রোগাক্রান্ত ডাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এরকম লাভের আশায় সর্বত্র ডাল কিনে ডালের শেষ প্রান্তে ছত্রাক আক্রান্ত অংশ টুকু সংগ্রহ করতে গিয়ে গাছের বড় অংশও কেটে নিচ্ছে। বড় গাছের ডাল কাটা পড়ায় একসময়ে পরিবেশ রক্ষাকারী এসব বড় বড় গাছ মারা যাচ্ছে। গাছের ডাল বিক্রির টাকার এই লোভটি ছাড়তে পারলেন না ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মোঃ সেলিম শিকদার। তিনি মঙ্গলবার উপজেলা ক্যম্পাসের বড় বড় কয়েকটি শিরিষ গাছের ডাল দক্ষিন ডুমুরিয়া গ্রামের জনৈক এনামুল হকের কাছে অবৈধ ভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন। ডাল ক্রেতা সহজে ভাইরাসের অংশ সংগ্রহ করতে গিয়ে বড় বড় ডাল কেটে ফেলেছেন। ভাইরাস সংগ্রহকারীরা ছোট অংশটুকু নিয়ে গেলেও ওই কর্মচারী সেলিম শিকদার বড় অংশটুকু তার সরকারি বাসভবন উপজেলা ক্যাম্পাসের 'মল্লিকা' ভবনের সামনে স্তুপিকৃত করে রেখেছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন এটি সেলিম শিকদার জ্বালানী হিসেবে বিক্রির জন্য রেখে দিয়েছেন। মোঃ সেলিম শিকদার ডুমুরিয়া উপজেলায় দীর্ঘ কয়েক ধরে কর্মরত রয়েছেন। অনেকেই বদলি হলেও তিনি রযেছেন বহাল তবিয়তে।সেলিম সিকদারের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা গ্রহনের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতাদের সেবা প্রদান অন্যথায় নানা অজুহাতে ফাইল আটকিয়ে হয়রাণীর  অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয়রা জানান,শিরিশ গাছের এই রোগ বা ভাইরাস পোকাকে লাক্ষা বলা হয়। এই লাক্ষা আক্রান্ত ডাল এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন লাক্ষা আক্রান্ত ডালের কেজি চোরাবাজারে হাজারের উপরে। বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, রোগাক্রান্ত ডালের উপরের আঠা তুলে দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে।  এই আঠা অত্যন্ত মূল্যবান। এটা দিয়ে কাঠের আসবাবপত্র ও পিতল বার্নিশ করা, ওষুধের ক্যাপসুলের কোটিং, চকলেট ও চুইংগামের কোটিং, ডাকঘরের চিঠি বা পার্সেল সিলমোহর, পুতুল, খেলনা, টিস্যু পেপার তৈরিসহ নানা ধরনের কাজে লাক্ষা পোকার আঠা ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে মোঃ সেলিম শিকদার বলেন, ইউএনও স্যারের সাথে সিএ সাহেব কথা বলে মৌখিক অনুমতি নিয়েছেন। তাই ২৫ হাজার টাকায় ডাল বিক্রি করা হয়েছে। বড় বড় ডাল কেটে নিজের বাসার সামনে কেন রাখা হযেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।  ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, লাক্ষার আক্রমণে কোন গাছ মারা যায় না। লাক্ষা এক ধরনের ক্ষুদ্র পোকা। এ পোকার ত্বকের নিচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশ্য শক্ত ও পুরু হয়ে শিরিশ গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। ভাইরাসের আক্রমন থেকে গাছকে রক্ষা করতে ভাইরাস সংক্রমনকারি পোকা দমন করতে ইমিক্লোরোফিড গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকা মারা যায়। তিনি বলেন, ভাইরাস আক্রান্ত ডাল সংগ্রহের নামে বড় বড় ডাল কেটে ফেলানোর কারণে বড় গাছটিও মারা যেতে পারে।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আল আমিন জানান, গাছের ডাল বিক্রির টাকা উপজেলা পরিষদের মসজিদে দান করা হয়। তবে ডাল কাটলে গাছের ক্ষতি হতে পারে এমন বিষয়টি আমার জানা নেই।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে