বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে দেশের মাথাপিছু আয় কমে ২ হাজার ৭৩৮ মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে, যা সাময়িক হিসাবের তুলনায় ৪৬ ডলার কম। এ ছাড়া, সামগ্রিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিও লক্ষণীয়ভাবে কমেছে। সাময়িক হিসাবে যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.৮২ শতাংশ বলা হয়েছিল, চূড়ান্ত হিসাবে তা ৪.২২ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধরনের অর্থনৈতিক নিম্নগতি একদিকে যেমন দেশের উন্নয়ন কাঠামোর জন্য অশনিসংকেত, অন্যদিকে এটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.৩৭ শতাংশ, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে মাত্র ৩.৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই খাতে বিনিয়োগ কমার পাশাপাশি রপ্তানি আয়েও ধস নেমেছে, যার অন্যতম কারণ বৈশ্বিক মন্দা, কাঁচামালের উচ্চমূল্য এবং স্থানীয় শিল্পে গ্যাস সংকটের মতো সমস্যা। বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানি আয়ের সংশোধিত হিসাবের কারণে শিল্প উৎপাদন নিম্নগতিতে পৌঁছেছে। এই অবস্থায় দেশীয় শিল্প ও বিনিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত নীতি সহায়তা না থাকলে সংকট আরও গভীর হবে। মাথাপিছু আয় কমে যাওয়া মানে হচ্ছে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অর্থনীতির এই পতনের পেছনে নীতিগত ভুল, অব্যবস্থাপনা এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব কাজ করছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সরকার এই সংকট মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে? প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা এবং শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করছে যে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখতে হলে সরকারের উচিত রপ্তানি খাতের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, শিল্প খাতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা। নতুবা এই নিম্নগতি দেশের সার্বিক অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।