বাংলাদেশ সবসময় উদ্ভট উটের পিঠে চড়েই এগিয়েছে। চেষ্টা করেছে উদ্ভট উটের মত করে উদ্ভট অর্থনীতি-শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীেিক কালকেউটে প্রজতির রঙ লাগিয়ে এগিয় যেতে। শুরুটা অবশ্য করেছে খন্দকার মোস্তাক সহ একগাঁদা গাঁধা। এদের নেকে আাবার বর্ণচোরার ম বর্তমান সরকারেও রয়েছে। যে কারণে নির্মমতা এসে দানা বেঁধেছে শ্রমিকদের উপর।
যদিও মি মনে করি-মে দিবস হলো এমন একটি দিন যা সকল ধর্ম,বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠির নিপিড়িত মানুষকে একই সমতলে দাঁড় করিয়ে দেয় । ইহা দুনিয়ার সবর্ত্রই সমভাবে সমাদৃত ও গৃহিত হয়েছে । অথচ এই দিনটিকেও কোন কোন দল, কোন কোন সংগঠন কর্পোরেট চিনআয় প্রবাহিত করেছে। যে কারণে মনে হচ্ছে- এবার যখন মে দিবস পালিত হচ্ছে, তখন পুঁজিবাদী বিশ্বে চলছে চরম সংকট । যা পৃথিবীর শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের জীবন যাত্রাকে এক সীমাহীন অনিশ্চিয়তার দিকে নিয়ে যাচ্ছে । যদি ও ক্যানেশিয়ান উন্নয়ন মডেল ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনে এক মহা বির্পযয় ডেকে আনছে, তবু ও মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে । চলমান বিশ্বে নির্বিচার সংস্কার, বেসরকারী করণ, অবাধ ছাটাই, চাকুরীচ্যুত করন, অর্থনীতির উদারিকরণ শ্রমজীবি মানুষকে দিনে দিনে এক কষ্ট কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে । তুলনামূলক ভাবে বিগত দুই দশকের তুলনায় এখন শ্রমজীবি মানুষের মাঝে নিরবতা ভেঙ্গে জেগে উঠার ও শ্রেণী সংগ্রামের চেতনাকে শাণিত করার প্রবণতা পরিদৃষ্ট হচ্ছে, তারা জেগে উঠছে দাবী আদায় ও নতুন দুনিয়া গড়তে। মহান আরব বসন্ত, পৃথিবী ব্যাপী অকুপাই আন্দোলন, রাশিয়ার রাজ পথের গণ প্রতিবাদ ও পদ চারনা , চিনের আঞ্চলিক বিদ্রোহ ও কর্মবিরতি, গ্রিসের সাধারণ মহাধর্মঘট, স্পেন, ইটালী, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ফ্রান্স, হাঙ্গেরী, রোমানিয়া, ব্রিটেন এবং ইউরূপের বাহিরে প্রতিটি মহাদেশে, ভারত থেকে চিলি ও ইজরায়েলের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিপবের নতুনভাবে সূচনা হয়েছে ।
ইহিাস যেহেতু বলছে যে, ১ মে, ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে শাহাদত বরনকারী শ্রমিকদের সম্মানে এই দিনটি বিশ্ব ব্যাপী পালন করা হয় । তারা সাদা পতাকা নিয়ে ৮ ঘন্টা কাজ করার দাবীতে মিছিল নিয়ে রাজ পথে নেমেছিল । যখন তারা ‘হে মার্কেটে’ এর কাছে পৌছাঁয় তখন, পুলিশ তাদের উপর গুলি বর্ষন করলে সাদা পতাকা শ্রমজীবি মানুষের রক্তে ভিজে লাল হয়ে উঠে । কিন্তু এই দিনটির স্মরনে আর্ন্তজাতিকভাবে পালনের জন্য কোন সরকার বা তাদের কোন আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ গ্রহন করেনি । মাকর্সবাদের মহান পথ প্রদশর্ক ফ্রেডারিক এঙ্গেলস ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিকের কংগ্রেসে শ্রমিকশ্রেণীর আর্ন্তজাতিকতার প্রতিক হিসাবে এই দিনটি পালনের জন্য সিদ্ধান্ত আকারে ঘোষনা করেন । মে দিবস হলো এমন একটি দিন যা সকল ধর্ম,বর্ণ, জাতি ও গৌষ্ঠির নিপিড়িত মানুষকে একই সমতলে দাঁড় করিয়ে দেয় । ইহা দুনিয়ার সবর্ত্রই সমভাবে সমাদৃত হচ্ছে । শ্রমজীবি মানুষ কর্তৃক পৃথিবীর সবর্ত্র এই দিনটিকে পালনের জন্য সর্বোত ভাবে গ্রহন করা হয় । ১৯০৪ সালে, মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে মহান লেনিন তাঁর এক নিবন্ধে লিখেন,“ শ্রমিক বন্ধুগণ ! মে দিবস আসছে,সকল দেশের শ্রমজীবি মানুষ ইহা পালন করবেন, তাদের জেগে উঠার ও আত্মসচেতন জীবন গড়ার প্রত্যয়ে, তারা একাত্মতা ঘোষনা করবেন সেই সংগ্রামের প্রতি যা অনাহার,দারিদ্রতা, অপমান নির্যাতন, নিপিড়ন সহ সকল প্রকার জবর দস্তির অবসান ঘটাবে । সমাপ্ত হবে মানুষ কর্তৃক মানুষ শোষনের সকল প্রকার ব্যবস্থার । দুইটি বিশ্ব পরস্পর মূখোমূখী দাড়িঁয়ে আছে ; মহান এক লড়াইয়ে জন্য। পুঁিজবাদ বিশ্ব ও শ্রমিকশ্রেনীর বিশ্ব, শোষক শ্রেনীর ও দাসত্বের বিশ্ব এবং ভ্রাতৃত্বের ও স্বাধীনতার বিশ্ব ”।
সে যাই হোক,দ্বিতীয় কমিউিনিষ্ট আর্ন্তজাতিকের রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিচ্যুতি ও মে দিবসের চেতনায় শ্রমিক শ্রেণীর আর্ন্তজাতিক
শ্রমিক যারা যুদ্ধে তারা থাকে সবার আগে/ সকল সময় দেশ-মানুষের জন্য শ্রমিক জাগে/ জেগে থাকে কৃষক-শ্রমিক জেগে থাকে নিত্য/ এসব দেখেও গলে না ভাই মালিক শ্রেণির চিত্ত/ তাদের কেবল টাকার কথা মাথা বোঝাই ঋণ/ এই কারণেই শ্রমিক শ্রেণি আজো পরাধীন/ শ্রমিক শ্রেণির স্বাধীনতা আনতে হলে জাগুন/ তা না হলে অর্থনীতির গায়ে লাগবে আগুন...
কেন যেন মনে হয়- মহান মে দিবস ও নারী শ্রমিক ইতিহাস শ্রমিকের অধিকার মে দিবস ও শ্রমিক শ্রেণি আসলে আমরা শ্রম বা শ্রমিকের মর্যাদা বুঝেও বুঝতে চাই না। একজন মানুষের জীবনধারণের জন্য যা যা প্রয়োজন, অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এসবই একজন শ্রমিকের প্রাপ্য। আর এটাই হচ্ছে শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা। একুশ শতকে এসে শ্রমিকরা এর কতোটুকু মর্যাদা বা অধিকার ভোগ করছে? বর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। কারণ শ্রমিকরা এ দেশের সম্পদ। তাদের কারণেই দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রয়েছে। এ কারণে তাদের অবহেলার চোখে দেখা ঠিক নয়। তারাপদ আচার্য্য পৃথিবীর মেহনতি মানুষের জন্য আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই দিনটির মাধ্যমে তারা তাদের কাজের প্রকৃত স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দিনটিকে পাওয়ার জন্য মানুষ নিজের জীবন রক্ষার জন্য, ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিবাদ-সংগ্রাম করেছে মালিকদের বিরুদ্ধে। যুগে যুগে দেশে দেশে সমাজে খেটে-খাওয়া শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি মানুষ দেশ-জাতির উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। কেননা যে কোনো দেশের উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে তারাই বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আবার তারাই সবচেয়ে বেশি শোষিত-বঞ্চিত হয়েছে। নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুগে যুগে সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছে এসব অসহায় গরিব শ্রমিক শ্রেণি। নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে বছরের পর বছর। তারা সংগ্রাম করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে নিজেদের দাবি আদায় করেছে। যে কোনো পেশাজীবী মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে কোনো রক্তপাত যে বৃথা যায় না, ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রমাণ এ মহান মে দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় শ্রমিক শ্রেণি আশার আলো খুঁজে পেয়েছে। এ মহান মে দিবস হচ্ছে পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের বিজয় নিশান। এ কারণে মে দিবস বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিক শ্রেণির মানুষ আত্মত্যাগের এক বিরাট ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাদের সুমহান আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বীকৃতি পেয়েছে শ্রমের মর্যাদা। শ্রমজীবী মানুষের কাছে 'সিলভিস' একটি কিংবদন্তি নাম। সিলভিস ছিলেন লোহা ঢালাই শ্রমিকদের তরুণ নেতা। তার নেতৃত্বে ন্যাশনাল লেবার ইউনিয়ন সর্বপ্রথম আমেরিকায় দৈনিক আট ঘণ্টা শ্রমের দাবি করে। মিল মালিকরা তাদের দাবি অগ্রাহ্য করলে মালিকদের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘাত বাঁধে। অনেক শ্রমিক নিহত হলে মিল মালিকরা তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হন। আর সে থেকেই পৃথিবীর দেশে দেশে শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়ে আসছে। শ্রমের মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে রক্ত দিয়েছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ। তাই দিনটি শ্রমিক শ্রেণির মানুষের মহান দিন। নিজেদের জীবন দিয়ে তারা তাদের দাবি আদায় করেছে। তবুও প্রভুদের কাছে শোষকদের কাছে তারা মাথানত করেনি। মানুষের দাবি বা অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তখন মানুষ প্রতিবাদে-বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং রক্ত দিয়ে সে দাবি প্রতিষ্ঠিত করে। বিশ্বে এর অনেক নজির রয়েছে। তবে মহান মে দিবস তার অন্যতম। শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান বিষয় ছিল শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ। অর্থাৎ শ্রমিকরা তাদের মজুরির বিনিময়ে দৈনিক কতো ঘণ্টা শ্রম দেবে, তা নির্ধারণ ছিল না। শ্রমিকরা দৈনিক যতো পরিশ্রম করত, মজুরি দেয়া হতো তার চেয়ে কম। তাই শ্রম নির্ধারণ ও শ্রমের বিনিময়ে যথার্থ মজুরির দাবিই ছিল শ্রমিক আন্দোলনের প্রধান বিষয়। ইতোমধ্যে মে দিবস পেরিয়েছে ১২৫ বছর। এতো বছর পরও শ্রমিকরা নানা সমস্যায় জর্জরিত। আজো সমাজে তাদের অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এখনো দেশে দেশে শ্রমিক শোষণ চলছে।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন বকেয়া রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে চায়। এ নিয়ে মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় দ্বন্দ্ব দেখা যায়। তাছাড়া আমাদের দেশে শ্রমিকদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। এসব নারী ও শিশু বিভিন্ন কল-কারখানা, বিশেষ করে গার্মেন্ট শিল্পে তারা বেশি কাজ করে থাকে। অথচ আমাদের সংবিধানে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। তথাপি বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কাজ করেও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই আবার জীবনঝুঁকির মধ্যেও পড়ে যাচ্ছে। মারাও যাচ্ছে অনেক শ্রমিক। বাংলাদেশের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার কারণে তারা শারীরিক-মানসিকভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না। শিক্ষাসহ বিভিন্ন সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা হচ্ছে বঞ্চিত। এসব শিশু স্নেহ-ভালোবাসার অভাবে এক সময় অপরাধ জগতে পা বাড়ায়। তাছাড়া প্রায় প্রতি বছর গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিগুলোয় বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এসব দুর্ঘটনায় অনেক নারী-পুরুষ-শিশু মারা যায়। দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক মারা যায়, তাদের পরিবারের রুজি-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তারা চোখেমুখে অন্ধকার দেখে। সমাজে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের বেতন-ভাতাদি তো বাড়ছে না। ফলে সমাজের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত নাগরিকের জীবনের মতো তাদের জীবনেও নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়, হতাশা। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টর ও সংস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রতিটি পেশার মানুষ ও শ্রমিককে তাদের প্রাপ্ত মর্যাদা ও অধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিককদের জন্য সরকারী ও বেসরকরীভাবে পেনশন ভাতা দিতে হবে। যদি এই দাবীটি বাস্তবায়ন হয়; তাহলে আমার বিশ্বাস শ্রমিক অসন্তোষ আর দানা বাঁধবে না। আমাদের শ্রমিকেরা থাকুক ডালে ভাতে; দিবসে সেই প্রত্যাশাতে াকবে সবাই মিলে...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি