মালটা চাষের সম্প্রসারণে স্বাবলম্ভী হচ্ছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার চাষীরা। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উদ্যোগে সমতল ভূমির প্রদর্শনী প্লটে চাষ করা সুস্বাদু বারি জাত-১ এর মালটা এখন দখল করছে স্থানীয় বাজার।
আগৈলঝাড়া উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের আসাদুল হক হাওলাদার ও বলুহার গ্রামের জলিল সরিফ জানায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেখান থেকে বিনামূল্যে বারি জাত-১ এর মালটা গাছের চারা পেয়ে ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ৫০ শতক জমিতে বারি জাত-১ এর মালটা চারা রোপন করেছি। সরকারের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখী প্রকল্পের আওতায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সরকারে নির্দেশনায় নিবির পরিচর্যার কারণে চারাগুলো বড় হয়ে একবছরের মধ্যেই ফুল ও ফল ধরতে শুরু করেছে। প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে ৬০ করে ফল ধরেছে।
অন্যদিকে উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ফুল্লশ্রী গ্রামের তাহের আলী মোল্লার পুত্র খলিলুর রহমান জানান, গত বছরই তার রোপিত গাছে মালটা ধরেছিল, তবে তা পরিমানে কম ছিল। এবছর ওই গাছগুলোতে প্রচুর পরিমানে ফল ধরেছে। ফলের কারণে নুয়ে পড়া ডাল বেঁধে দিতে হয়েছে বাঁশ দিয়ে। তার প্রতিটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি করে ফল হয়েছে। গাছ থেকে বছরে দু’বার ফল সংগ্রহ করা যায়। ফলের সাইজও বেশ ভাল। গড়ে চারটা মালটায় এক কেজি ওজন হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বাগান থেকে ফল বিক্রি করতে শুরু করেছেন। প্রতি কেজি মালটা দুইশ’ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
বাজারে হলুদ রং এর মালটা পাওয়া গেলেও চাষি খলিলুর রহমানর, আসাদুল হক হাওলাদার ও জলিল সরিফ এর বাগানের মালটার রং সবুুজ। ফল পরিপক্ক হলেই সবুজ রংয়ের মালটা খেতেও খুব মিষ্টি। চাহিদার কারণে বাড়ি থেকেই বেশিরভাগ ক্রেতারা মালটা ক্রয় করে নিচ্ছেন। বাগান থেকে সতেজ মালটা নিয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি।সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে চাষাবাদ করায় ও রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত মালটার চাহিদা ও সুনাম ছড়িয়েছে উপজেলার সর্বত্র। খলিলুর রহমানের মালটা বাগানের একপাশে রয়েছে কমলা, জলপাই, আমলকি, লিচু, জাম্বুরা ও আম গাছ। এসব গাছেও ধরেছে ফলের সমারোহ। কৃষি অফিসের মাধ্যমে গাছের চারাসহ সঠিক পরামর্শ নিয়ে তিনি মালটা চাষ করে একজন সফল চাষী মর্জাদা অর্জন করেছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নাসির উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায়, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র মন্ডল, সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তুলি দাস, অজয় কুমার বিশ্বাস,অতিসম্প্রতি খলিলুর রহমানের মালটা বাগান পরিদর্শন করেছেন। এ সময় কৃষি কর্মকর্তা জানান, আসাদুল হক হাওলাদার, জলিল সরিফ ও খলিলুর রহমানের বাগান দেখে অনেকেই এখন মালটা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কৃষি অফিস মালটা গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা জনগনের স্বাস্থ্য ও পুষ্টিগুনের কথা চিন্তা করে বারি-১ জাতের মালটা উদ্ভাবন করেছেন। সমতল ভূমির দোআঁশ মাটি মালটা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। প্রাকৃতিক সার, পোকা মাকর দমনে বিশেষ উপায়ে তৈরী করা বালাই নাশক ব্যবহার ও ভাল পরিচর্যা করলেই মালটার ভাল ফলন পাওয়া যায়। একটি মালটা গাছ অন্তত ২০ বছর পর্যন্ত নিয়মিতভাবে ফল দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, এলাকায় প্রথমে কেউ মালটার চাষ করতে চায়নি। উপজেলায় মোট ২৫টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এখন ওই প্রদর্শনী দেখে অনেকেই মালটা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। যারা মালটা চাষ করতে চায় কৃষি অফিস থেকে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।