কোনো রাজনৈতিক দল একটানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকলে বাস্তবিক পক্ষেই দেশের যেমন উন্নতি হওয়ার কথা। তেমনই কমে আসার কথা দুর্নীতির সূচক। এ ছাড়া অর্থ অপচয় রোধ হবে। কালো টাকার প্রভাব কমবে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। সর্বপরি সুষম টেকসই উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। এসব ধারণা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও অর্থনীতিবিদদের।
আজ বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বিশ্লেষকদের ওসব টেকসই উন্নয়ন ধারণার ছিটে ফুটাও নেই বর্তমানে উন্নয়নের ফেরিওয়ালাদের এগিয়ে যাওয়ার ডিজিটাল এ বাংলাদেশে। একটানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রাজনৈতিক দলের আসীন থাকার সুফল সূচকে বিশ্লেষকদের হিসাবের জাবেদা পাল্টে দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার।
কোনো রাজনৈতিক দল টানা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার ফলশ্রুতিতে বিশ্লেষকদের দেশের টেকসই উন্নয়ন ধারণা বর্তমানে ম্লান হয়ে মহাজোটের উন্নয়ননামায় ঘটেছে উল্টো। মহাজোট সরকারের টানা নয় বছরের ব্যাংকিংখাতের হালাবস্থা রীতিমতো চোখ কপালে উঠার দশা বিরাজ করছে। দীর্ঘ নয় বছরে লুটপাটের ঘটনায় একদিকে যেমন দেশের ব্যাংকিংখাত ক্রমেই ভয়ঙ্কর রুপে ধাবিত হচ্ছে। অন্যদিকে মহামারি আকার ধারণ করেছে ঋণ খেলাপির পরিসংখ্যান।
সবমিলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যেনো খেলাপির পরিসংখ্যান বাড়াতেই ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে রাঘব বোয়ালদের।
বর্তমান সরকারের সময়ে একদিকে যেমন যাচাই বাছাই না করেই ঋণ দেওয়ার নগ্ন প্রতিযোগিতা হচ্ছে। তেমনই অন্যদিকে ঋণ নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হওয়া যেনো নিয়মে পরিণত হয়েছে।
আজ নির্দিদ্বায় বলা যেতে পারে, সরকারের সাথে খেলাপিদের আঁতাত থাকায় খেলাপি ঋণ আদায়ে অসহায় হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো। ফলে এদিকে খেলাপি ঋণের পরিসংখ্যান হু-হু করে বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে হওয়ায় আমানতকারীরা চরম ঝুঁঁকির মুখে পড়ছেন।
দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের পরিসখ্যান ঘেঁটে জানা যায়, স্বাধীনতার ৩৮ বছরে অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত যেখানে ঋণ খেলাপির পরিমাণ ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা ছিল। সেখানে মহাজোট সরকারের চলতি নয় বছরে ঋণ খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। অতএব বলা যায়, স্বাধীনতার ৩৮ বছরে যে পরিমাণে খেলাপি ছিল এ সরকারের চলতি ৯ বছরে তা বেড়ে চারগুণে অধপতন ঘটেছে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। আর এ সময়ে ঋণ অবলোপন করা হয়েছে ৪৮ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। অবলোপন যুক্ত করলে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৩৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। যা রীতিমতো আতঙ্কিত হওয়ার ঘটনাও বটে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি, সার্কুলার জারি ও খেলাপি গ্রাহকদের বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিলেও ঋণ আদায় হচ্ছে না। বরং প্রতিবছরই বাড়ছে ঋণের পরিমাণ ।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার সময় দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। সরকারের চলতি ৯ বছরে তা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৮৮ হাজার কোটি টাকায় ঠেকেছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংগুলোর ঋণ দেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ২২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। ওই হিসেবে খেলাপি ঋণ বিতরণকৃত ঋণের ১০.৭৮ শতাংশ। এছাড়া ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। আর চলতি বছরের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। আর ২০১৭ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। ওই হিসেবে মাত্র তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত মার্চ শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এটা ব্যাংকগুলোর বিতরণকৃত ঋণের ২৯.৮৪ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপির পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে তিন মাসে বেড়েছে সাত হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি খাতের ৪০ ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। যা বিতরণকৃত ঋণের ৬ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপির পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। সে হিসেবে তিন মাসে খেলাপি ে বেড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। মার্চ শেষে বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা এবং বিদেশী ৯ টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ বেশি থাকায় ব্যাংকগুলো নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমছে না। সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসা সুদের হার খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে আবার হুহু করে বাড়ছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও বাড়ছে। বেড়ে যাচ্ছে পণ্যের দাম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উদ্যোক্তা ও ভোক্তারা। ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে হওয়ায় ঝুঁঁকির মুখে পড়ছেন আমানতকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১১ সালে তা বেড়ে ২২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা হয়। কিন্তু পরের বছর ২০১৩ সালে তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ ৪২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই বছরেই খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। শতকরা হিসাবে বেড়েছে প্রায় ৮৯ শতাংশ। পরের বছর ২০১৩ সালে খেলাপি ঋণ সামান্য কমে ৪০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকায় নেমে আসে। ২০১৪ সালে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ৫০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা হয়। ২০১৫ সালে তা আরও ৯ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয় ৫৯ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এ ঋণ বেড়ে হয় ৬২ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৭ সাল শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয় ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের মার্চে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকায়।
ওই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৬০ শতাংশ খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালে ১৯ দশমিক ৫১ শতাংশ, ২০১৫ সালে ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ ও ২০১৬ সালে ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ বাড়ে খেলাপি ঋণ। তবে ২০১১ ও ২০১৩ সালে আগের বছরের তুলনায় খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছিল।
এদিকে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই খেলাপি ঋণের একটি অংশ অবলোপন হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯ সালে ২ হাজার ২৫০ কোটি, ২০১০ সালে ২ হাজার ১০০ কোটি ও ২০১১ সালে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়। তবে একমাত্র ২০১২ সালে আগের বছরের তুলনায় অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ কমেছিল। আলোচ্য ৯ বছরে ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে ৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে ৪ হাজার ৬৭০ কোটি টাক এবং ২০১৭ সালে ২ হাজার ৪১০ কোটি টাকা অবলোপন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এতে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ফের দুই অঙ্কের ঘর অতিক্রম করেছে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। একই সাথে মার্চ পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য মন্দঋণ বেড়ে হয়েছে ৭৩ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা।
প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনায় ব্যবসায় লোকসানের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা খেলাপি হয়। এ ক্ষেত্রে খেলাপি ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বন্ধক রাখা জমি বা সম্পদ নিলাম করে ঋণের টাকা আদায় করে ব্যাংক। কিন্তু এখন অনেক ঋণগ্রহীতাই ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি হচ্ছেন। তারা বন্ধকী সম্পত্তি নিলাম করে টাকা আদায়েও বাধা দিচ্ছেন।
ফলে বিপাকে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। ঋণগ্রহীতারা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা আইনজীবীদের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করান। পরিস্থিতির সুযোগ নিতে যেনো অনেকটা নিয়ত করেই ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন প্রভাবশালীরা। এতে ব্যাংকব্যবস্থায় করুন দশা দেখা দিয়েছে। জনগণের করের টাকায় প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন পুনর্ভরণ করে বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে।
খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ব্যাপারে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, নিয়মাচার না মেনে রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দেওয়ার কারণেই অর্থ আদায় হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে ঋণ ফেরত না দিলেও কিছু হয় না। আদালতের আদেশ নিয়ে বছরের পর বছর ভালো থাকা যায়। এ জন্য ঋণ ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। এ থেকে অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ব্যাংক খাতকে পুরোপুরি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে হবে। তাঁর মতে, পুনর্গঠন ও পুনঃতফসিল এক ধরনের হিসাব জালিয়াতি। এসবে ঋণ আদায় হয় না। সর্বোচ্চ কিছুদিন লুকিয়ে রাখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমে জানান, ঋণ খেলাপির জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, রাজনৈতিক বিবেচনায় বড় ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় না আনা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের দুর্বল ব্যবস্থাপনা দায়ী। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় যেসব ব্যবসায়ীরা খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছিলেন ওইসব ঋণ আবারও খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আবার এ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো উন্নতিও হয়নি। ব্যবসায়ী ক্রমন্বয়ে লোকসানের ঘানি টানতে টানতে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। (তথ্যসূত্র : সংগ্রাাম- ০৭.০৬.২০১৮)
জানা যায়, একজন ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি জাতীয় কোনো নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে পারেন না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খেলাপি ঋণ আদায়ের সবচেয়ে বড় জটিলতা দেখা দিয়েছে আইনগত জটিলতা। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ে আইনি জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। খেলাপি গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য বিভিন্ন আইনি ফাঁকফোকর বের করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলাপি গ্রাহকরা শ্রেণীকরণ হতে বেরিয়ে আসার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে শ্রেণীকরণের ওপর স্থাগিতাদেশ নিচ্ছেন। এ সুবাদে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণখেলাপিকেই গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করছে। ওই গ্রাহক ফের খেলাপি হয়ে আবার আদালতে মামলা দায়ে করছেন। এভাবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছেন। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে দেখা দিচ্ছে। একই সাথে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
‘এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী’ এমন আওয়ামী রসালো স্লোগান চারিদিকে চাউর থাকলেও সার্বিক বিচারে দীর্ঘদিন ধরে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে রয়েছে দেশের ব্যাংকিংখাত। ব্যাংকের অর্থ অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট হচ্ছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। ব্যাংকগুলোতে বিশেষত রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকে সুশাসনের অভাব প্রকট। ব্যাংক খাতের সংকট মোকাবেলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথা বলা হলেও বড় ধরনের সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
যার জলজ্যান্ত প্রমাণ হচ্ছে, অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ না করে এবারের বাজেটে ব্যাংকের কর কমানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের আশ্বাস দিয়ে সরকার পিছিয়ে এসেছে। এহেন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিংখাত নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
আজ বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করছেন না। ঋণ দুর্বৃত্তদের অপকর্মের খেসারত গুণতে হচ্ছে গোটা জাতিকে। বলা যায, দেশের ব্যাংকিং খাতে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির সংখ্যা বাড়ছে, যার জন্য দায়ী কিছু বড় ঋণখেলাপি। তারা ব্যাংক থেকে নানাবিদ কৌশলে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু আর ফেরত দিচ্ছেন না। আর বড় বড় ঋণখেলাপির কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ পাহাড়ে পরিণত। যা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতএব, খেলাপি ঋণের পাহাড় দেশের উন্নয়নের অশনি সংকেতই বটে।
[এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক]