আজ সত্যি অবাক হয়ে যাই, প্রতিদন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন পত্রিকা হাতে পাই বা অনলাইন পত্রিকায় যখন দেখতে পাই বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষণের মত ঘটনা গুলো, সত্যি বলতে খুব কষ্ট হয় আর মনে মনে ভাবি আমরা আজ কোন যুগে বাস করছি। হঠাৎ যেন মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। দেশব্যাপী হঠাৎ বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষকের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধারাও। এমনকি রেহাই পাচ্ছেন না বাকপ্রতিবন্ধী বা ভবঘুরে পাগলও। অপসংস্কৃতি, আকাশ সংস্কৃতি, অশ্লীলতা, ঘুষ, দুর্নীতিসহ নানা কারণে দিনে দিনে সামাজিক অবক্ষয় আর অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ- এ তিন মাসে ১৭৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ৫৫ এবং মার্চে ৬৬ শিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৫৫ জনের বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে; যা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।
এবং বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ৮৬ জন, ২০১৩ সালে ১৭৯, ২০১৪ সালে ১৯৯, ২০১৫ সালে ৫২১, ২০১৬ সালে ৪৪৬ এবং ২০১৭ তে ৫৯৩ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ২৮ শিশুকে হত্যা এবং ৪৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়।
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুস শহীদ মাহমুদ তাদের বার্ষিক শিশু অধিকার পরিস্থিতি-২০১৭ পর্যালোচনা করে ‘স্টেট অফ চাইল্ড রাইটস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেন, ২০১৭ সালে ৫৯৩ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে যার মধ্যে ৭০ শিশু গণধর্ষিত হয়েছে, ৪৪ প্রতিবন্ধী বা বিশেষ শিশু ধর্ষিত হয়েছে, ২২ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে এবং সাত শিশু ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও ৭২ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
২০১৭ সালে ৫১ শিশু ইভটিজিং এবং ৯০ শিশু যৌন নিপীড়ন-হয়রানির শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। সেইসঙ্গে অব্যাহতভাবে বেড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকালে বখাটেদের উৎপাত এবং পর্নোগ্রাফির শিকারের ঘটনা। ২০১৭ সালে বখাটেদের হাতে লাঞ্ছনা, মারধর এমনকি হামলায় জখম হয়েছে ৬২ শিশু এবং প্রতিবাদ বা প্রতিহত করতে গিয়ে বখাটেদের হামলায় আহত হয়েছে ৫০-এর বেশি অভিভাবক।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে শিশু হত্যা এবং ধর্ষণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ২০১৭ সালে ৩৩৯ শিশু হত্যা এবং ৫৯৩ শিশু ধর্ষণে শিকার হয়েছে, যা ২০১৬ সালের চেয়ে ২৮ শতাংশ এবং ৩৩ শতাংশ বেশি। সেইসঙ্গে বেড়েছে গণধর্ষণ, প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণ, বখাটেদের মারধর-কুপিয়ে জখম করা এবং গোপনে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা।
২০১৬ সালে ৩৫৮৯ শিশু বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল, যার মধ্যে ১৪৪১ শিশু অপমৃত্যুর এবং ৬৮৬ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। অর্থাৎ ২০১৭ সালে সামগ্রিকভাবে শিশু নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ, যার মধ্যে শিশু অপমৃত্যু এবং যৌন নির্যাতন বেড়েছে যথাক্রমে ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ।
অন্যদিকে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘অধিকারের’ দেয়া তথ্যমতে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৩,৬৩৮ টি, যার ভেতরে গণধর্ষণ ছিল ২,৫২৯ টি। ধর্ষকদের বিষাক্ত দৃষ্টি থেকে বাদ যায়নি শিশু, প্রতিবন্ধী থেকে ষাটোর্ধ্ব মহিলা কেউই। এই সময়ের ভেতর ৬,৯২৭ জন শিশুকে ধর্ষণ করা হয়। ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয় ১,৪৬৭ জনকে। ধর্ষণের গ্লানি সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন ১৫৪ জন। পরিসংখ্যানগুলো সত্যিই অনেক ভয়াবহ
আবার, ওয়েব সাইট ঘেটে দেখা যায়, বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের হার ভারতের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে সারা বছর ধর্ষণের ঘটনা নারী নির্যাতনের শতকরা ১৮ ভাগ যা ভারতে ৯.৫ ভাগ। এ ছাড়া ঢাকায় সারা বছরে ধর্ষনের ঘটনা মোট নারী নির্যাতনের শতকরা ২০.৪৬ ভাগ যা নয়াদিল্লিতে ৯.১৭ ভাগ।
এসব পরিসংখ্যান জরিপ সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। জরিপ, পরিসংখ্যান তৈরীর সংগঠনগুলোই বলছে প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি। আমার মতে দেশে মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু হচ্ছে। জন্ম নিচ্ছে মানুষের মনে ভয়ানক একপ্রকার পশুত্ব। আজ দেশে কেমন যেন অস্থিরতা বিরাজ করছে। আস্থাহীন হচ্ছে মানুষ দেশের আইন ও প্রশাসনের উপর। অনেকে মামলা করতে চায়না দ্বিতীয় বার হামলার ভয়ে, নির্যাতিত ধর্ষিত হয়েও মুখ বুজে সহ্য করে অসংখ্য নারী ও কন্যাশিশু। আজ আমাদের সেই নরপশুদের বিরুদ্ধে তুলতে হবে জোরালো প্রতিবাদ। সেই সঙ্গে সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে অপরাধের বিরুদ্ধে, গড়ে তুলতে হবে শক্ত প্রতিরোধ। সর্বপরি আমাদের মনে রাখতে হবে ধর্ষণের প্রতিবাদ করা যেমন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, তেমনী এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করা আমাদের কর্তব্য। ধর্ষকদের পক্ষে কেউ যদি না লড়েন সেটা হবে অন্যতম একটি প্রতিরোধ। ধর্ষণ রোধে আমাদের মন মানসিকতা ঠিক করতে হবে। কে ক্ষমতাবান ক্ষমতাধর তাদের সবাইকে আইনের চোখে একজন সাধারন মানুষ হিসাবে রাখতে হবে। দেশের আইন শক্তিশালি করতে হবে। একদম প্রাথমিক পর্যায় থেকে সুষ্ঠ ভাবে ধর্মীয় শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। কেন না যৌন ব্যভিচার সর্ব যুগে সর্ব ধর্মমতে নিন্দানীয়। নিকৃষ্ট, পাপাচার প্রচলিত কুশিক্ষা অনৈতিক লোভ লালসা সংস্কৃতি আর পদ্ধতি করন কৃত র্দুনীতির অবাধ ক্ষেত্রকে সম্পূন গুড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিষ্ঠা করতে হবে সভ্য-ন্যায় ভিত্তিক কল্যাণ মুখি সমাজ। সভ্য সুন্দর সমাজ মানব সভ্যতার বিনির্মানে এক সৃষ্টির্কতার প্রতি বিশ্বাস সুশিক্ষা সৎ নৈতিকতা সমাজিক মূল্যবোধের চর্চার বিষয়গুলি অপরিহার্য। আর সংঘঠিত অপরাধ গুলির ন্যায় বিচার ও অপরাধীর দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। কারণ, অপরাধীর শাস্তি না হওয়া অপরাধ বিস্তারের অন্যতম প্রধান কারণ। সততার সাথে নিজ নিজ র্ধম ও চর্চা মানুষকে সর্বপ্রকার অসভ্য-অনাচার, নিকৃষ্ঠ, পাপাচার থেকে মুক্তি দিতে পারে।