রাজবাড়ী জেলাটি পদ্মা নদী বেষ্টিত হওয়ায় প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গনের শিকারে হাজার হাজার পরিবার নদীতে বিলিন হচ্ছে। এতে করে সহায় সম্বল, ঘর বাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব জীবন যাপন করছে ভাঙ্গন কবলিতরা।
এরই মধ্যে রাজবাড়ীর নদীভাঙ্গন কবলিত হাজারেরও বেশি পরিবার তাদের সব কিছু হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন খোলা আকাশের নিচে, রাস্তার পাশে, স্কুলের মাঠে, বাঁধের ধারে। নিঃস্ব পরিবার গুলো এখন দিন যাপন করছেন খেয়ে না খেয়ে। প্রতিটি মূহুর্ত এখন অনাহার-অর্ধাহার ও কষ্টে কাটছে নদী গর্ভে সব হারানো মানুষ গুলোর।
দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম, রতনদিয়া ও ছোট ভাকলা ইউনিয়নের দের হাজারেরও বেশি পরিবার নদী গর্ভে সব হারিয়েছেন। এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের সাহাজ্য সহযোগীতা পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী এসব পরিবারগুলো। তাদের দাবী সরকার যদি তাদের বসবাসের জন্য স্থান করে দিত তাহলে তারা একটু বাঁচতে পারতেন।
গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহতা ছিল সবচেয়ে বেশি। রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলার পাংশা, বালিয়াকান্দি, সদর ও গোয়ালন্দ সহ এই চারটি উপজেলা পদ্মা নদী তীর বর্তী হওয়ায় প্রতি বছরই এরা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সহায় সম্বল, বাড়ি ঘর, ফসলি জমি সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন।
চলতি বছর নদী ভাঙ্গনে ১ হাজার ৫ শত ৩২ টি পরবারের প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়েছেন। এখন দিন যাপন করছেন রাস্তার পাশে, স্কুলের মাঠে ও বাঁধের ধারে। এসব পরিবার গুলোর এখন কষ্টে আর সীমা নেই। খেয়ে না খেয়ে এ পরিবার গুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন।
দৌলতদিয়া ও দেব গ্রাম ইউনিয়নের ভাঙ্গন কবলিত পরিবার গুলো নদী গর্ভে সব হারিয়ে বসবাস করছেন বিভিন্ন স্থানে খোলা আকাশের নিচে। ভাঙ্গনে নিঃস্ব পরিবারগুলো বেড়ি বাঁধ, স্কুলের মাঠ, রাস্তার পাশে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে অসহায়ের মত বসবাস করছেন। কোন কোন দিন কাঁটছে তাদের খেয়ে না খেয়ে।
এদের মধ্যে ময়না বেগম ,রাশিদা আক্তার, কুলসুম বেগম, মনোয়ারা বেগম, জহির মন্ডল, আরশাদ শিকদারদের মত মানুষ দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের মাঠে ও রেলেওয়ের পাশে এবং বিভিন্ন ফাঁকা স্থানে কোন মত ঠাই নিয়েছেন বাঁচার তাগিদে। তারা বলেন, একসময় তাদের ঘার বাড়ি, ফসলি জমি, গরু ছাগল, গোলা ভারা ধান সবই ছিল। এখন একাধিক বার নদী ভাঙ্গনে পরে তারা পুরোপুরি নিঃস্ব জীবন যাপন করছেন। তাদের এখন দেখার কেউ নেই বলে জানান অসহায় পরিবার গুলো সরকারের পক্ষ থেকে ও জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোন সাহায্য সহযোগীতা তারা পাননি বলে অভিযোগ করেন।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আশরাফ হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ডেও প্রায় সাড়ে আটশত পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের সাহায্য-সহযোগীতা তিনি পাননি ভুক্ত ভোগীদের দেওয়ার জন্য। তিনি চান সরকারের পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানরা এই নদী ভাঙ্গন কবলিতদের পাশে যদি দাড়ায় তাহলে তারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে বলেন।
মোস্তফা মেটাল ইন্ডস্ট্রিজের পরিচালক মোঃ সেলিশম মুন্সি বলেন, তিনি ভাঙ্গন কবলিতদের ৫ শত জনের মধ্যে ব্যাক্তি উদ্যোগে তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ত্রানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি চান তার পাশাপাশি বৃত্তবানরাও যেন নদী ভাঙ্গন কবলিতদেও পশে দাড়ায় এবং সরকার যেন খাস জমি বন্দোবস্তের মাধ্যমে তাদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করে। তাহলে এরা কিছুটা হলেও ভালো থাকতে পারবে বলে জানান।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, এবারের ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে জেলার প্রায় ১ হাজার ৫ শত পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। তাদের পূনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করে যাদের জমি আছে তাদের টিন বরাদ্দ ও যাদের জমি নেই তাদের খাস জমি বরাদ্দের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের বাস স্থানের বন্দোবস্তে উদ্যোগ গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।