কাতারে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে হতে যাওয়া শান্তি আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধিদলে নারীরাও থাকছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। ১৯-২১ এপ্রিল দোহার ওই বৈঠকে বিরোধীদলীয় রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের কর্তাব্যক্তিসহ খ্যাতনামা আফগানদের সঙ্গে তালেবানরা শান্তি প্রক্রিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উক্তি বলবেন।
ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতেও উভয়পক্ষের মধ্যে এ ধরনের বৈঠক হয়েছিল, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দেড় যুগ ধরে দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা দেশগুলোর যে যুদ্ধ চলছে, তা বন্ধে কাতারে যে বিভিন্ন দফায় শান্তি আলোচনা চলছে তাতে আলোচনায় নারীদের যুক্ত করার দাবি অনেকদিনের। নারী অধিকারের বিষয়ে উগ্র রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গির জন্য পরিচিত তালেবানরা এতদিনে তাতে সাড়া দিল। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা আফগানিস্তানের ভবিষ্যত সমঝোতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আগ্রহ দেখাল বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। মস্কোতে তালেবানদের সঙ্গে যে রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন, দোহার বৈঠকে তাদের দল আরেকটু বড় হতে পারে; এবার এ দলে সরকারি সামান্য কর্মকর্তাও থাকতে পারেন বলে ধারণা রয়টার্সের। সরকারি কর্মকর্তাদের এমন অন্তর্ভুক্তিতে তালেবানদের অসম্মতি থাকবে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিদ্রোহী এ গোষ্ঠীর নেতারা এর সামনে আফগানিস্তানের পশ্চিমা মদদপুষ্ট সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। “কাতারের দোহায় বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধি দলে নারীরাও থাকছেন। তারা কেউই তালেবান জ্যেষ্ঠ নেতাদের পরিবারের সদস্য নন, তারা সবাই সাধারণ আফগান, দেশে অথবা দেশের বাইরে থাকেন। এ নারীরা ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমাদের লড়াইয়ের সমর্থক ও অংশীদার,” টেলিফোনে এমনটাই বলেছেন জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। তালেবানের এ মুখপাত্র পরে এক টুইটে প্রতিনিধিদলে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট করেছেন। তালেবানদের যে দলটি আফগান রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবে, শুধু সে দলেই নারীরা থাকছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মূল শান্তি আলোচনায় নয়, বলেছেন তিনি। মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান ত্যাগ, আফগানিস্তানের ভূখ- ব্যবহার করে আল-কায়েদা ও অন্যান্য জঙ্গি দলের আক্রমণের পথ বন্ধ সাধন ও যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন দূত জালমে খলিলজাদ নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত অল্পসংখ্যক ৩মাস ধরেই তালেবান বিদ্রোহীদের আলোচনা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে নতুন দফা বৈঠকের তারিখ এখনও ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র। “নতুন কোনো আলোচনা শুরুর সামনে আমরা আন্তঃআফগান বৈঠকের ফলাফল জানতে উদগ্রীব,” বলেছেন তিনি। বিরোধী রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করলেও তালেবানরা বরাবরই আফগান সরকারের সঙ্গে বসতে অসম্মতি জানিয়েছে। আফগানিস্তানের এখনকার সরকারকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের পুতুল’ হিসেবেও তারা অ্যাখ্যা দিয়ে আসছে। রয়টার্স বলছে, আফগানিস্তানে এখনো রক্ষণশীলতার শেকড় বেশ গভীর হলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোট তালেবানদের উচ্ছেদ করার পর নারীদের অধিকারের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তালেবানরা ফের ক্ষমতায় এলে ওই অর্জন মিলিয়ে যায় যেহেতু তা নিয়েও আশঙ্কা আছে অনেকের। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ক্ষমতায় আসার পর উগ্র মৌলবাদী এ গোষ্ঠীটি নারীদের মুখঢাকা হিজাব পরতে বাধ্য করেছিল; নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মেয়েদের স্কুলে পড়া ও বাইরের কাজের ক্ষেত্রে। আগের ওই ধারণা থেকে তালেবানরা অনেকাংশে সরে এসেছে বলেও দাবি করছেন মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। সশস্ত্র এ গোষ্ঠীটি এখন ইসলামি শরিয়ার মধ্যেই মেয়েদের শিক্ষায় উৎসাহ ও নারী দাবি দেয়ায় আগ্রহী, বলেছেন তিনি। শান্তি আলোচনায় তালেবান প্রতিনিধিদলে নারীদের অন্তর্ভুক্তির এ খবরে সাধুবাদ জানিয়েছে আফগানিস্তানের পশ্চিমা মদদপুষ্ট সরকার, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা। “ভালো পদক্ষেপ। নারীরাই একমাত্র আফগান নারীদের দুর্দশা ও কষ্টের বিষয়টি বুঝতে পারবে। প্রতিনিধিদলে নারী রাখাই প্রমাণ করছে- তালেবানদের মতাদর্শে পরিবর্তন এসেছে,” বলেছেন ফওজিয়া কুফি। আফগান পার্লামেন্টের সাবেক এ সদস্য মস্কোতে তালেবানদের সঙ্গে রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের যে বৈঠক হয়েছিলে সেখানেও উপস্থিত ছিলেন। শান্তি আলোচনার অন্যান্য পর্বেও যেন নারীদের অন্তর্ভুক্তির এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির সদস্য জেয়ানা শাহিন। “তালেবানদের যদি আন্তর্জাতিক সমর্থনের ব্যাপারে আগ্রহ থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ যেকোনো সমঝোতায় নারীদের অন্তর্ভুক্তি ও মানবাধিকারের বিষয়গুলোতে তাদের নজর দেওয়া উচিত,” বলেছেন তিনি।