বাংলাদেশে এখন কোন মানুষের জীবনের মূল নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোন আইনের শাসন নেই। নেই মানুষের জীবনের কোন মূল্য। দেশে আজ অরাজগতা হত্যা ধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারা-সবকিছু চলছে অবলীলায়। কারণ কোথাও কোন জবাবদিহীতা নেই, কোন ন্যায় বিচার বৃহস্পতিবার সকালে বগুড়ায় নিহত বিএনপি নেতা মাহবুব আলম শাহীনের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
গত ১৪ এপ্রিল রবিবার রাতে বগুড়া শহরের উপ-শহর বাজারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে খুন হন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীন। তিনি শহরের ধরমপুর এলাকার মৃত আনিছুর রহমানের ছেলে। তিনি পরিবহন ব্যবসার কারণে সাবেক মোটর মালিক গ্রুপের নেতা ও বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের যুগ্ম আহবায়কও ছিলেন। পাশাপাশি তিনি আইন পেশায়ও নিয়োজিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার বেলা পৌণে ১১টায় শহরের ধরমপুর এলাকায় নিহত বিএনপি নেতা শাহীনের বাড়িতে যান। তিনি এ সময় নিহত শাহীনের অসুস্থ স্ত্রী আকতার জাহান শিল্পী ও তিন সন্তানের সঙ্গে দেখা করে তাদের সান্তনা দেন। এ সময় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জেলা বিএনপি সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁনসহ বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি নেতা শাহীনকে দলমত নির্বিশেষে বগুড়াবাসীর প্রিয় মানুষ ও রাজনৈতিক কর্মী উল্লেখ করে বলেন, ‘শাহীনের হত্যাকান্ডে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলার বর্তমান চিত্র প্রকাশিত করেছে।’ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে এই অবস্থার বিরুদ্ধে জনগণকেই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে। সমস্ত হত্যাকান্ডে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। তিনি বলেন আমরা ন্যায়-ইনসাফের জন্য লড়াই করছি। আমাদের অধিকারগুলো ফিরে পাবার জন্য লড়াই করছি। সেই লড়াইয়ে আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। তিনি আহবান জানিয়ে বলেন আসুন আমরা এক সাথে থাকি।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অসুস্থ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি সোজা হয়ে বসতে পারেন না। হুইল চেয়ার ছাড়া তিনি এখন চলতে পারেন না। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন তিনি যেন সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন। তারেক রহমান যেন বীরের বেশে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমানে দেশে আইনের শাসন নেই, ন্যায় বিচার নেই, মানবাধিকার নেই। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। কোথাও কারো নিরাপত্তা নেই। বিএনপি নেতা শাহীন হত্যা প্রমান করে দেশে আইনশৃংখলা বলতে কিছু নেই। তাই দেশের মানুষকে সকল অপকর্মের বিরদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, শাহীনের পরিবার আজ অসহায়। জনগনের পাশে দাঁড়ানোই শাহীনের অপরাধ। এ হত্যাকান্ডে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছেন মর্মে উল্খে করেন তিনি। তিনি কারাবন্দি বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের কথা উল্লেক করে বলেন, তারা বলেছেন, বগুড়াবাসীর পাশে ছিলাম ,আছি এবং থাকবো। তাই বগুড়াবাসী তাদের দুজনের জন্য দোয়া করবেন। তিনি আরো বলেন, অধিকার আদায়ে একসাথে থাকবেন। তিনি সকল নেতা কর্মীদের শাহীনের পাশে ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবার আহবান জানান। তিনি এ সময় নিহ শাহীনের আত্বর মোগফিরাত কামনা করে আরো বলেন যেকোন প্রয়োজনে যেকোন সময় তাদের পাশে থাকবো। আল্লাহ যেন শাহীনকে বেহেস্ত নসিব করেন।
মিজার্ ফখরুল কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার বিয়য়ে উদবেগ প্রকাশ করে বলেন, নেত্রী কারাগারে অত্যন্ত অসুস্থ্য। তিনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। এ ছাড়া তারেক রহমান বিদেশে রয়েছেন। তাই তাদের জণ্য দোয়া করবেন।
তিনি বৃহস্পতিবার সকাল দুপুরে সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব আলম শাহীনের পরিবারের সাথে সাক্ষাত শেষে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। তিনি শাহীনের শোকাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান এবং ধৈর্য্য ধরতে বলেন।
এসময় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, এ সরকারের আমলে মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। অবিলম্বে শাহীন হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচার করতে হবে। আমি এ আন্দোলনের সাথে থাকবো।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, শাহীন হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকবো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, জেলা সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, নবনির্বাচিত সংসদস্য আলহাজ¦ মোঃ মোশারফ হোসনে, সাবেক এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ ,বিএনপি নেতা আলী আজগর হেনা, আহসানুল তৈয়ব জাকির, এম আর ইসলাম স্বাধীন, শাহ মেহেদী হাসান হিমু, শাহাবুল আলম পিপলু, এস এম রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।