দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমান্তঘেঁষা ছোট্ট একটি উপজেলা হাকিমপুর হিলি উপজেলা। একটি পৌর সভা ও তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে হাকিমপুর হিলি উপজেলা। আর এ উপজেলাতে এবার প্রথমবার চাষাবাদ হয়েছে সুপারফুড কিনোয়া ও চিয়া সিড। ফলে এই শস্যদানা নিয়ে এই অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। দুই ধরণে নতুন ফসল চাষাবাদ করে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শামীম খান। নতুন এই ফসল চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন এ উপজেলার কৃষকেরা। স্থানীয় কৃষি বিভাগ নতুন ফসল চাষাবাদে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
হাকিমপুর হিলি উপজেলার বোয়ালদাঁড় গ্রামের শামীম খান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স করেন। চাকুরি নেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। সেখান থেকে যোগ দেন বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে। কিন্তু মন না বসায় চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন বাড়িতে। এরপর যোগ দেন কৃষিকাজে। ব্ল্যাক রাইচ বা কালো ধানের পর এবার উত্তর আমেরিকার সুপারফুড হিসেবে পরিচিত কিনোয়া চাষ করেছেন তিনি। এর পাশেই আবাদ করেছেন মেক্সিকোর মরু অঞ্চলের ফসল চিয়া সিড। এগুলো শস্যদানা। সারা বিশ্বে সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এর পুষ্টিমানও বেশ ভালো। বাংলাদেশে তেমন পরিচিত নয়। পঞ্চগড় থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৪২ শতাংশ জমিতে আবাদ করেছেন এই কৃষক। এরইমধ্যে ফসল কাটা শেষে হয়েছে। কাটা-মাড়াইয়ের পর প্যাকেটজাত করে তা বিক্রির জন্য সরবরাহ করা হবে দেশের সুপারশপগুলোতে। প্রতি কেজি কিনোয়ার দাম ৬০০-৮০০ টাকা। মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে সরিষা চাষের মতো একই পদ্ধতিতে রোপণ করতে হয় কিনোয়া ও চিয়া সিড। ফসল ঘরে তোলা যায় ৬০-৭০ দিনের মধ্যে। প্রতি বিঘায় ফলন হয় তিন-চার মণ।
কৃষি উদ্যোক্তা শামীম খান বলেন,দুটি ফসলই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।কিনোয়া আমিষ, কার্বোহাইড্রেড ও ফাইবারে ভরপুর একটি খাবার। চিয়া সিডও সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। প্রথমবারের মতো ৪২ শতক জমিতে কিনোয়া ও চিয়া সিড চাষে খরচ হয়েছে ১০-১২ হাজার টাকার মতো। যে ফলন হয়েছে,তাতে উৎপাদিত ফসল ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করতে পারবো। দুটি ফসল চাষই তুলনামূলক লাভজনক। কারণ এগুলোর দাম অনেক বেশি।
স্থানীয় কৃষকরা বলেন,এই ফসলগুলো আমাদের অঞ্চলে প্রথমবারের মতো চাষাবাদ হয়েছে। এতে সফলতাও পেয়েছেন শামীম খান। তার এই আবাদ দেখে আমরাও এসব ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। আগামীতে আমরাও আবাদ করবো। সময় ও খরচ কম লাগে। সেই তুলনায় লাভজনক ফসল।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আরজেনা বেগম জানান, সুপার ফুড নামে খ্যাত এই পণ্যটিতে রয়েছে হাইপ্রোটিন,ভিটামিন,মিনারেল,আয়রন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। তাই এই উপজেলায় প্রথমবারের মতো এই চাষবাদ হয়েছে। কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি অধিদপ্তর।