আজ ২০ এপ্রিল শনিবার বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আব্দর রউফ এর ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী। ২০ এপ্রিল এই দিনে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদের সাথে সম্মুখ সমরে তিনি সাবেক পাবর্ত্য চট্রগ্রাম বর্তমান রাংগামাটি জেলার নানিয়ারচর থানার বুড়িঘাট নামক স্থানে শহীদ হন। আজ শনিবার ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বীরশ্রেষ্ঠের বড় বোন মোসা. জোহরা বেগম ও ছোট বোন মোসা. হাজেরা বেগম ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলাধীন বীর শ্রেষ্ঠের জন্মস্থান রউফ নগর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগারে পারিবারিক উদ্যোগে ভোর ৬টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাড়ে ৬টায় কোরআনখানী এবং বাদ যোহর আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল এবং দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
পিতা মুন্সী মেহেদী হাসান মাতা মকিদুননেছার একমাত্র পুত্র সন্তান মুন্সী আবদুর রউফ ১৯৪৩ সালের মে মাসের ১ তারিখে বর্তমান মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নের রউফ নগর (সালামাতপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১১ বছর বয়সে তাঁর পিতৃবিয়োগ ঘটে। এরপর আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া সম্ভব না হওয়ায় তিনি তৎকালীন ইপিআর (বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস) বর্তমান (বিজিবি)তে ১৯৬৩ সালের ৮ মে সৈনিক পদে যোগদান করেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ১৩১৮৭।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার উইংয়ে কর্মরত অবস্থায় ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন এবং তিনি মেশিন গানার হিসেবে ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডারের অধীনে রাঙ্গামাটির মহালছড়ি নৌপথ অঞ্চলে বুড়িঘাট নামক স্থানে চিংড়িখালের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন। ‘৭১ এর ২০ এপ্রিল পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে মুন্সী আবদুর রউফের মেশিন গানের গুলিতে পাকবাহিনীর ২টি লঞ্চ, একটি ¯প্রীডবোড ডুবে পাকবাহিনীর দুই প্লাটুন সৈন্যের সলিল সমাধি ঘটে। এ সময় হঠাৎ প্রতিপক্ষের নিক্ষিপ্ত মটার সেলের আঘাতে তিনি শহীদ হন। ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ শহীদ হবার দীর্ঘ ২৫ বছর পর ১৯৯৬ সালে বুড়িঘাট নিবাসী জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও দয়াল কৃঞ্চ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ এর কবরের স্থান সনাক্ত করতে সক্ষম হন। ১৯৯৭ সালে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়।
বিগত ২০০৮ সালে ২৮ মে তার নিজ গ্রাম সালামাতপুরের নাম রউফ নগর রাখা হয়। ওই বছরেই তার নামে নিজ গ্রাম রউফ নগরে স্থানীয় সরকার সমবায় মন্ত্রনালয় ফরিদপুর জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি যাদুঘর ও গ্রন্থগার নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ন কৃতিত্তের জন্য সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধীতে ভূষিত করেন। এ ছাড়া তার নামে এলাকায় কামারখালী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ ডিগ্রি কলেজ যা প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারি করেছেন। গন্ধখালী বীরশ্রেষ্ঠ উচ্চ বিদ্যালয়, সাভারে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ গেট, ঢাকায় বীরশ্রেষ্ট মুন্সী আবদুর রউফ রাইফেলস স্কুল এ- কলেজ সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।