ঝালকাঠি জেলায় ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০ টি বিদ্যালয় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায়। জীবনের ঝুকি নিয়েই বিধ্বস্ত ভবনেই চলছে শিশু শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া। পাঠদানের সময় জীবন ঝুকি থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে ক্রমশই কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এতে করে সরকারের শতভাগ শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাশে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। বিদ্যালয় ভবনটি নতুন হওয়া সত্ত্বেও নদী ভাঙনের ভয়ে পাশের পুরনো একটি টিনের ঘরে চলছে পাঠদান। এভাবেই জেলার রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও সদর উপজেলার মোট ৮০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঝুঁকি নিয়ে লেখাপড়া করছে সহস্রাধিক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার মোট ৫৮৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০ টি বিদ্যালয় ভবন ইতোমধ্যেই অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এসব ভবন আশি ও নব্বই দশকে নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০-৩৫ বছর যেতে না যেতেই ভবনগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনটি আংশিক সংস্কার করা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ছাঁদ ও দেয়াল খসে পড়ে মাঝে-মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পিলারগুলো ক্ষয় হয়ে ভবনের কাঠামো দুর্বল হয়ে যাওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী। এর পরেও নিরুপায় হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। অনেক বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় একই কক্ষে দুই-তিন শ্রেণির ক্লাস নিতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও ভবনগুলোকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেই দায় সেরেছেন তারা।
সম্প্রতি জেলার নলছিটি উপজেলার নেয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিশু শিক্ষার্থীর হাতে একটি ফেস্টুন ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ওই এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম অপু। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর হাতে থাকা কাগজের উপরে হাতের লেখা “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মরার ভয়ে পড়া হয় না”। ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক (ঐধসরফ উপ ঔযধষড়শধঃযর) তার ফেসবুকে “যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বড় ধরনের মেরামত/সংস্কার প্রয়োজন তার তালিকা ছবিসহ আগামি ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ডিসি অফিসে দাখিলের অনুরোধ করা হলো” লিখে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে অনেকেই বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। তারমধ্যে নেয়ামতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিশু শিক্ষার্থীর ফেস্টুনটি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
নলছিটির পশ্চিম সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রোকেয়া আক্তার জানান, ‘গত বছর ছাদের পলেস্তার খসে পড়ে আমার মাথা ফেটে গিয়েছিল। তাই ক্লাসে বসতে ভয় লাগে।’
উপজেলার রায়পাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মো. জুয়েল জানান, বৃষ্টির সময় আমাদের স্কুলের ছাঁদ দিয়ে পানি পড়ে বই-খাতা ভিজে যায়। আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন হলে আমরা পড়ালেখায় আরও মনোযোগী হতে পারতাম। উপজেলার তারাবুনিয়া সরকারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা আক্তার জানান, ‘আমাদের স্কুলটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। মাঝে-মধ্যেই ছাঁদ থেকে টুকরো খসে পরে আমরা আহত হই। আমাদের অনেক বন্ধুরা অন্য বিদ্যালয়ে চলে গেছে।’ এসব বিদ্যালয়ের দুরবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কাছে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জনান বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নবিজ উদ্দিন সরকার জানান, ইতোমধ্যে ৮০ টি বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, দ্রুত এসব বিদ্যালয়ে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হবে। পুরাতন ভবনগুলোকে উপজেলা নিলাম কমিটির মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ দরদাতাকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক জানান, জেলা অতিঝুকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে কয়েকটি বিদ্যালয় ভবন প্রাথমিকভাবে সংস্কারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। বাকিগুলোর মেরামত/সংস্কারের জন্য ছবিসহ তালিকা চাওয়া হয়েছে। আগামি ২৫ এপ্রিলের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ঝালকাঠি জেলায় মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯৩৭টি (কিন্ডার গার্টেন বাদে)। এর মধ্যে কলেজ ২৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৩টি, কারিগরি বিদ্যালয় ১০টি, কামিল মাদ্রাসা ০১টি, অন্যান্য মাদ্রাসা ১২২টি (কওমি বাদে) এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৮৮টি।