লালমনিরহাট সদর উপজেলায় অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আতাহারা বেগম নামে এক সহকারী শিক্ষিকাকে শারীরিক লাঞ্চিত ও পেটালেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বসুনিয়া। এ ব্যাপারে লাঞ্চিতা সহকারী শিক্ষিকা আতাহারা বেগম প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বসুনিয়ার অপসারন ও শাস্তির দাবীতে বিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছে।
এর আগে বুধবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল ছুটির পর সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি আনন্দ বাজার নি¤œ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
সহকারী শিক্ষিকা আতাহারা বেগম তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ২০১৩ সালের মে মাসের ১৫ তারিখে নিয়োগ প্রাপ্ত হইয়া কালমাটি আনন্দ বাজার নি¤œ ম্ধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। ওই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই লম্পট প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বসুনিয়ার কু-নজরে পড়েন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় ওই প্রধান শিক্ষক তাকে বিভিন্ন সময়ে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে তাকে তার চাকুরী হারাতে হবে বলেও হুমকী দেয়।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে স্কুল ছুটির পর লম্পট প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বসুনিয়া তাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে প্রথমে স্কুলের পরীক্ষার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলে। তখন সে তার বাবা অসুস্থ এবং বাবা বাড়ি যাবে বলে দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে প্রধান শিক্ষক তার কাছে এসে ততার মাথা ধরে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে। এ সময় সে কাদঁতে শুরু করলে তাকে ছেড়ে দিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তারপরেও এ কথা কাউকে বললে তার চাকুরী চলে যাবে বলে হুমকী দেয় এবং তার রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে। পরে তিনি সেখান খোন থেকে বেড়িয়ে প্রথমে বিষয়টি তার সহকারী শিক্ষকদের বলে এবং পরে বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির নিকট মৌখিক অভিযোগ করেন। মুহুর্তের মধ্যে ঘটনাটি বিদ্যালয়ের চারদিকে চাউর হয়ে পড়লে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে আসতে শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে লম্পট প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বিদ্যালয় থেকে চুপিসারে বেড়িয়ে পালিয়ে যায়।
পরে রাত ৯টার দিকে বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি আশরাফুল আলম প্রামানিকসহ সদস্যগণ এসে লম্পট প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে সহকারী শিক্ষিকা আতাহারা বেগমকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরদিন সকালে যথা সময়ে বিদ্যালয়ে এসে দেখতে পারেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার ব্যাপারে গভর্নিং বডির কেউ আসেননি বা সে ব্যাপারে তারা কোন ব্যাবস্থাও নেননি। পরে তিনি জানতে পারেন লম্পট প্রধান শিক্ষক টাকা খাইয়ে গভর্নিং বডির সবাইকে প্যাকেট করেছেন। তাই তিনি বুধবার দুপুরে লম্পট প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের বিরুদ্ধে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও লালমনিরহাট সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বসুনিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে স্কুলের পরীক্ষার বিষয়ে দায়িত্ব নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সে দায়িত্ব নেননি। তাই তিনি তার উপর একটু রাহারাগি করেছেন মাত্র। সেই সাথে তার বিদ্যালয়ের এই বিষয়টি পত্রিকায় লিখলে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মানহানী মামলা করারও হুমকী প্রদান করেন।
বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি আশরাফুল আলম প্রামানিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি তেমন বড় কোন ঘটনা নয়। যদিও তিনি জানার পর পরই বিদ্যালয়ে গিয়েছেন, ঘটনা শুনেছেন। বিষয়টি সমাধা করে দেয়া বলেও ওই সহকারী শিক্ষিকা আতাহারা বেগমকে বলা হয়েছে। তারপরেও আপনারা সাংবাদিকরা সামান্য একটা বিষয় নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছেন কেন। তিনি পত্রিকায় সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ করেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা লিপিকা দত্ত জানান এখন পর্যন্ত তিনি এ ব্যাপারে কোন অভিযোগ পাননি। তবে অভিযোগ হাতে পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলম জানান, এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আতাহারা বেগম বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দিয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য ঘটনা স্থলে কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।