ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় খোকন মিয়া (৩০) নামে এক ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে পুলিশের চার সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) ও এক কনস্টেবলসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহারের পর রাতে তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সাময়িকভাবে বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- গৌরীপুর থানার সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল আউয়াল, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ও কনস্টেবল আল আমিন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানা গেছে, বলুহা গ্রামের বাসিন্দা খোকন মিয়া বর্ষা টেলিকম নামে একটি দোকানের মালিক। তিনি সেখানে মোবাইলের ফ্লেক্সি লোড, ইন্টারনেট কার্ড ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক বস্তু বিক্রি করতেন। কিন্তু খোকন মিয়া তার দোকানে ইয়াবা ব্যবসা করেন অভিযোগে গত রোববার রাত ১০টার দিকে গৌরীপুর থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্য সেখানে অভিযান চালান।
এ সময় গৌরীপুর থানার এএসআই আবদুল আউয়াল, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ও কনস্টেবল আল আমিন সাদা পোশাকে দোকানের ভেতর ঢুকে তল্লাশী শুরু করেন। পরে দোকানের ভেতর একটি ইলেক্ট্রিক তারের বান্ডেলে ইয়াবা ভরা একটি পুটলি খুঁজে পান তারা। কিন্তু খোকন মিয়া পুটলিটি তার নয় দাবি করলে পুলিশের ওই সদস্যরা তাকে মারধর করেন।
তখন আশেপাশের দোকান মালিক ও কর্মীরা খোকন মিয়া নির্দোশ ও ভালো মন্তব্য করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় এসআই রহুল আমিন ও কামরুল পালিয়ে গেলেও বাকি তিন পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।
এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০ টা থেকে ২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন দোকান মালিক, ব্যবসায়ী ও কর্মীরা। পরে রাত আড়াইটার দিকে গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) সাখের হোসেন সিদ্দিকীসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। তারা ঘটনার সঠিক বিচার করবেন আশ্বাস দিয়ে অবরুদ্ধ থাকা পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।
বর্ষা টেলিকমের মালিক খোকন মিয়া জানান, ঘটনার দিন পুলিশের ওই পাঁচ সদস্য তার দোকানে এসে তল্লাশীর কথা বলেন। তিনি রাজী হলেও পুলিশ সদস্যরা তার দোকানের সিসিটিভি ক্যামেরার তার খুলে দোকান তল্লাশী করেন। পরে তারা ইয়াবা ভরা একটি পুটলি খুঁজে পান। তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে হাতকড়া পরানো হয়। তিনি পুটলিটি তার নয় বললে উপস্থিত জনতার সামনেই তাকে মারধর করা হয়।
খোকন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের ওই পাঁচ সদস্যই তার দোকানে ইয়াবা রেখে নাটক সাজিয়েছিলেন। মূলত তাকে ফাঁসানোর এই নাটক সাজানো হয়। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন।
এ ব্যাপারে এএসআই আনোয়ার হোসেনকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ফ্লেক্সিলোড ব্যবসার পাশাপাশি খোকর মিয়া ইয়াবা ব্যবসা করে খবর পেয়ে তারা অভিযানে যান। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক তাকে ভালো দাবি করে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন।
গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, দোকানের ভেতর ইয়াবা রেখে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন পুলিশের ওই পাঁচ সদস্য। তাদের পুলিশ লাইনে প্রত্যাহারের পর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।