শব্দহীন-অন্ধকার-গভীর রাত, কোন এক সময়, কোন কিছুতে হাত না দিয়ে দুর্বৃত্তরা এক এক করে তরমুজের প্রতিটি চারা মাটি থেকে গোড়া ধরে টান দিয়ে উপড়ে ফেলে বিনষ্ট করে চলে গেছে শাহজাহান আলী (৫৩) নামের এক কৃষকের আড়াই হাজার তরমুজ গাছের চারা। গোড়া থেকে চারা উপড়ে ফেলায় চারা গুলি নুইয়ে পড়েছে এবং সবগুলি গাছই মৃত হয়ে গেছে।
রমজান মাসে তরমুজ বিক্রি হতে পারে এমন আশাকে ধারন করে অনেক কষ্টে শ্রমে ঘামে গড়ে তুলেছিল তরমুজ ক্ষেত। সেই আশা আর পূরন হল না। সব কিছুকে ধ্বংস করে সর্বশান্ত দিশেহারা করে দিয়ে গেছে হতভাগ্য কৃষক শাহজাহানের স্বপ্নকে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১লা মে বুধবার রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার রুপনারায়নকুড়া ইউনিয়নের দক্ষিন কাওয়াকুড়ি গ্রামে। এঘটনায় ওই দিনই শাহজাহান বাদী হয়ে নালিতাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন এবং এ ব্যাপারে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
কিছু কিছু চারায় ফল এসে গেছে তরমুজ বিনষ্টের এমন নৃশংস ঘটনায় এলাকার শতশত মানুষ শাহজাহানের তরমুজের ক্ষেত দেখার জন্য ভিড় করছেন। বিনষ্টের এমন চিত্রে এলাকার মানুষ রাগে ক্ষুভে ফুসে উঠেছে। এলাকাবাসী জানান, সামনা সামনি কিছু না বলে গাছের চারা বিনষ্ট করে বৃঝিয়ে দিয়ে গেছে শত্রুতা কাকে বলে।
কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, অন্যের কাছ থেকে একসৃজনের জন্য ৬ হাজার টাকা দিয়ে ৭০ শতাংশ জমিতে তরমুজ রোপন করা করেছিলাম। এই তরমুজের বীজ আনা হয়েছিল চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে। পরে বাড়ীতে এক জায়গায় চারা উৎপাদন করা হয়। ক্ষেত তৈরি করে সেই চারা আধুনিক প্রযুক্তিতে আড়াই মাসের মধ্যে মধ্যে চারা গাছে পরিনত হবে এবং ফল দিতে শুরু করবে। গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেভাবে চিন্তা করে কেল তৈরি করা হয়। চারার গোড়া যাতে কোন ভাবেই পানি না জমে এবং আগাছা চারাকে যাতে সমস্যা না করতে পারে সেজন্য ১৭ হাজার টাকায় ইলাষ্টিক পলিথিন ক্রয় করে চারা গুলির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। আগামী রমজান মাসে এই ফল উঠতে পারে তা বলেও ধারনা করেছিলাম। কিছু কিছু গাছে ফল আসতেও শুরু করেছিল। কিন্তু এমন সময় দুর্বৃত্তরা কিছু সময়ের ব্যবধানে রাতের আধারে সব কিছু ধ্বংস করে দিয়ে গেল।
এব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার এএসআই আজহারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। আমি ঘটনা স্থলে গিয়েছিলাম দুর্বৃত্ত কর্তৃক ধ্বংস হওয়া শাহজাহানের তরমুজ ক্ষেত দেখেছি। এ ব্যাপারে এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শরিফ ইকবাল বলেন, দুর্বৃত্ত কর্তৃক তরমুজ ক্ষেত বিনষ্ট হওয়ায় কৃষক শাহজাহানের অপুরনীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। আমরা তাকে বায়ো কীট নাশক, ফেরোমন ট্রেপ ও পরার্মশ প্রদান করে যাচ্ছিলাম। এখন ফল আসতে শুরু করেছিল। এটি এক সৃজনেই প্রায় ৫/৬ লাখ টাকা বিক্রি নেমে যেত। এমন সময় এঘটনায় সবাই হত বিহব্বল।