রাজশাহীর পুঠিয়ায় এবার র্যাবের অভিযানে জব্দকৃত গাঁজা বিক্রির দায়ে ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার খবর ফাঁস হওয়ায় পুঠিয়া থানা সম্পর্কে নীতিবাচক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এলাকার চাস্টল, রেস্টুরেন্টসহ লোকালয়ে চলছে একই বিষয়ে সমালোচনা। বিষয়টি পুলিশ সুপারের কানে গেলে তাৎক্ষনিকভাবে ওই এসআইকে প্রত্যাহার করা হয়।
সূত্রমতে, গত ২৭ এপ্রিল পুঠিয়া সদরে একটি কাভার্ড ভ্যান তল্লাশি করে ৯৬ কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব ৫। পরে র্যাব বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের শেষে গ্রেফতারকৃত ওই তিনজনকে পুঠিয়া থানায় সোপর্দ করে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান এসআই মনিরুল ইসলাম। যে কারণে মামলার আলামত হিসেবে জব্দকৃত ৯৬ কেজি গাঁজা তদন্ত কর্মকর্তা মনিরুলের কাছে হস্তান্তর করে র্যাব। পরে এসআই মনিরুল জব্দকৃত গাঁজাগুলো মালখানায় না রেখে থানা ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে রাখে। এরপর সেখান থেকে গত বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ কেজি গাঁজা মাদক ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বকুলের কাছে বিক্রি করে এসআই মনিরুল।
এর কয়েক ঘন্টা পর শুক্রবার ভোর রাত আড়াইটার দিকে পুঠিয়া উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সেই পাঁচ কেজি গাঁজাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে র্যাব ৫। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে- পুঠিয়া পৌরসভার কৃষ্ণপুর ওয়ার্ডের কাজিপাড়া এলাকার মৃত ফরিদ শেখের ছেলে জহুরুল ইসলাম বকুল , আনছার আলীর ছেলে শিমুল ইসলাম (৩০) ও গৌরাঙ্গ চন্দ্র সরকারের ছেলে গনেশ চন্দ্র সরকার। পরে র্যাব ৫ এর পক্ষ থেকে গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের শেষে সোপর্দ করা হয়।
এর আগে গ্রেফতারের সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত বকুল র্যাবকে জানায়, সেই ৫ কেজি গাঁজা পুঠিয়া থানার এসআই মনিরুল ইসলামের কাছ থেকে তারা কিনেছেন। তখন বিষয়টি র্যাবের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারকে জানানো হলে তাৎক্ষনিকভাবেই এসআই মনিরুলকে প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়।
এর আগেও পুঠিয়া থানায় এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটলেও দোষীদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। যে কারণেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলেও অভিমত এলাকাবাসীর।
নাম প্রকাশ না করার সর্তে পুঠিয়া থানার একাধিক কর্মকর্তা ও কনস্টেবল ছাড়াও এলাকার সচেতন কয়েকজন ব্যক্তি জানান, রাস্তায় তল্লাসীর নামে সাধারণ লোকজনের পকেটে ইয়াবা ও গাঁজার পুরিয়া দিয়ে ফাঁসানো হয়। পরে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা অহরহ ঘটে। এমনকি সম্প্রতি সিগারেট খাওয়ার অপরাধে তরুণ-তরুনীকে রাতভর পুঠিয়া থানা হাজতে আটকে অর্থ দাবি করা হয়। আর সেই দাবীকৃত টাকা না দেয়ায় মাদকসেবী হিসেবে তাদের চালান দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এমন বানিজ্য থেকে সংবাদকর্মীরও রেহায় পাননি।
এসব অভিযোগের বিষয় সম্পূর্ন সঠিক নয় দাবি করে রোববার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে পুঠিয়া থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ সাকিল আহমেদ মুঠোফোনের মাধ্যমে বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণেই এসআই মনিরুলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। যে অপরাধ করবে সে সাজা ভোগ করবে এটাই তো স্বাভাবিক।’
এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মুঠোফোনের মাধ্যমে বলেন, ‘প্রশাসনিক কারণেই এসআই মনিরুলকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিষয়ে এমন একটি ঘটনা শুনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।