এসএসসির ফলাফলে টানা তৃতীয়বারের মতো দেশসেরার গৌরব অর্জনের মধ্যদিয়ে হ্যাট্রিক করেছে রাজশাহীর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকশিক্ষা বোর্ড। এ বছর এই বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তবে এবারও এ বোর্ডের অধীনস্থ একটি স্কুল থেকে কেউ পাশ করেনি। আর দেশসেরায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড হ্যাট্রিক করলেও এ বোর্ডের ফলাফলে টানা দ্বিতীয়বারের মত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে জয়পুরহাট জেলা। সোমবার (৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসএসসির ফলাফল ঘোষণার সময় এ তথ্য নিশ্চিত করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আনারুল হক প্রামানিক।
তিনি জানান, এ বছর সব বিষয়ে পাস করেছে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৮ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী। ফলে এবারও পাসের হারে দেশ সেরা হয়েছে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড। পাসের হারে টানা অষ্টম বছরের মতো ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ভালো ফলাফল করেছে। গতবছরের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। তবে এবার ছেলেদের চেয়ে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত সংখ্যায় মেয়েরা এগিয়েছে। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র সংখ্যা ১১ হাজার ১০৯ ও ছাত্রী সংখ্যা ১১ হাজার ৬৮৬ জন।
সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহকৃত ফলাফল সীটের তথ্য মতে, গত বছর রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ০৭, ২০১৭ সালে ৯০ দশমিক ৭০, ২০১৬ সালে ৯৫ দশমিক ৭০, ২০১৫ সালে ৯৪ দশমিক ৯৭, ২০১৪ সালে ৯৬ দশমিক ৩৪ ও ২০১৩ সালে ৯৪ দশমিক ০৩ শতাংশ।
ফলাফল সীটের তথ্য মতে, এসএসসির ফলাফলে ২০১২ সালের পর সর্বনি¤œ পাসের হার ছিল গত বছর। তবু ওই বছর টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হয়েছিল রাজশাহী বোর্ড। এবারও সারাদেশের ১০ শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাসের হার দিয়ে হ্যাটট্রিক করল রাজশাহী। এবার রাজশাহী বিভাগের আট জেলা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৮৩৫ জন শিক্ষার্থী। এবার ছাত্রদের পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৪ ও ছাত্রীদের ৯২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। রাজশাহী বোর্ডে এবার ২ হাজার ৬৪৬টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে শতভাগ পাসকৃত স্কুলের সংখ্যা ৪৩১টি। তবে পবা উপজেলার বাগসারা স্কুল থেকে অংশগ্রহণকৃত তিন পরীক্ষার্থীর কেউ পাশ করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনারুল হক প্রামানিক বলেন, মোট ২ লাখ ৪ হাজার ৮৩৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ জন এবং ছাত্রী ছিল ৯৬ হাজার ৬১৮ জন। এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৫০১ জন। রাজশাহী বোর্ডের আধীনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় মোট ২৫৬টি কেন্দ্রে।
এবার পাশের হার বাড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘গত বছর রাজশাহী বোর্ড দেশসেরা হলেও পাসের হার কম ছিল। তাই এবার সতর্কতা অবলম্বন করে শিক্ষকদের আরও ভালভাবে পড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সবাই চেষ্টা করেছেন। আর এ কারণেই এবার পাসের হার বেড়েছে।’
জানা গেছে, রাজশাহী ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বাদে দেশের অন্য শিক্ষাবোর্ডগুলোর মধ্যে এবার ঢাকায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬২, কুমিল্লায় ৮৭ দশমিক ১৬, বরিশালে ৭৭ দশমিক ৪১, যশোর বোর্ডে ৯০ দশমিক ৮৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮ দশমিক ১১ ও দিনাজপুরে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ। ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সবার নিচে অবস্থান করছে সিলেট বোর্ড।
এদিকে দেশসেরায় এই শিক্ষাবোর্ড হ্যাট্রিক করলেও বোর্ড সেরা হতে পারেনি শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী। সার্বিক ফলাফলে এবার বোর্ডে দ্বিতীয় হয়েছে রাজশাহী। টানা দ্বিতীয়বারের মত শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে জয়পুরহাট জেলা। এই জেলায় মোট ৯ হাজার ৩২৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৮ হাজার ৮৫৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৯১ জন। এর মধ্যে ৯৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছাত্র এবং ৯৫ দশমিক ৮২ শতাংশ মেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
আর ৯২ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী। গত বছর এই বোর্ডের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে ছিলো রাজশাহী জেলা। এ বছর এখানে মোট ৩২ হাজার ২৯৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ১০৮ জন। এর মধ্যে ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ ছাত্র এবং ৯৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে।
এবার দুই ধাপ উপরে উঠে রাজশাহী বোর্ডে তৃতীয় অবস্থানে বগুড়া জেলা। এবার এ জেলায় ৯২ দশমিক ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। এবার এ জেলায় মোট ৩৫ হাজার ১৯ পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৩২ হাজার ২৬৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ১৮৬ জন। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৭৩ শতাংশ ছাত্র এবং ৯৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ ছাত্রী উত্তীর্ণ হয়েছে। গত বছর ৮৬ দশমিক ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ায় রাজশাহী বোর্ডে পঞ্চম অবস্থানে ছিলো বগুড়া।
আর টানা তৃতীয়বারের মত রাজশাহী বোর্ডে চতুর্থ অবস্থানে নওগাঁ জেলা। এবার জেলায় পাশের হার ৯১ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিন ধাপ নেমে এবার পাবনা জেলার অবস্থান রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পঞ্চম স্থানে। এখানকার পাশের হার ৯২ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর ৯১ দশমিক ০৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে বোর্ডে ষষ্ঠ অবস্থানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এক ধাপ নেমে বোর্ডে সিরাজগঞ্জ জেলার অবস্থান সপ্তম অবস্থানে। এ জেলায় পাশের হার ৯০ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর ফলাফলে টানা দ্বিতীয়বারের মত বোর্ডের তলানিতে নাটোর জেলা। এ জেলায় পাশের হার ৮৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়। এ বছর সারাদেশের গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ।