কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্যা পুওরেস্ট (আইএসপিপি) যত্ন প্রকল্পের তালিকা প্রণয়নের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতিরসহ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।
৮মে বুধবার গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় গর্ভবতী মা এবং শিশুদের বিনামূল্যে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও উৎকোচ না দেয়ায় তালিকা থেকে নাম বাদপড়া বঞ্চিত উপকারভোগীরা প্রকল্পের সভাপতি ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। বঞ্চিতদের অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছ থেকে পাওয়া ফরম পূরণ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদে জমা দেয়া হলেও তাদের নাম তালিকায় অন্তভর্’ক্ত করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে ও স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট (আইএসপিপি) যতœ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র গর্ভবতী নারী এবং পাঁচ বছরে নিচে শিশুদের পুষ্টির পরিবর্তে নগদ অর্থ প্রদানের লক্ষ্যে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় ৯ হাজার ৮’শ পরিবার এই প্রকল্পে অর্ন্তভূক্ত হয়।
প্রতিটি ইউনিয়নে গড়ে ১৪’শ জনকে কার্ড দেয়া হবে। যাদের ৫০ শতাংশের নিচে জমি রয়েছে ওইসব দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী নারী ও শূন্য থেকে ২৪ মাস এবং ৫ বছরের কমবয়সী শিশু রয়েছে, তারাই এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবে। সুবিধাভোগী গর্ভবতী নারী ৪বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে ৪ হাজার টাকা এবং টানা তিন বার হলে একটি বোনাস ভাতাও পাবেন। শিশু জন্ম নেয়ার পর ২৪ মাস পর্যন্ত মা ও শিশু ১৪০০ টাকা করে পাবেন। প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত শিশুর বয়স ৫ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তিন মাস পর পর ৭০০ টাকা করে ভাতা পাবে। প্রকল্প চলাকালীন সুবিধাভোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিকে তাদের উচ্চতা, ওজনসহ নিয়মিত পরীক্ষা করাতে আসলে এ অর্থ পাবেন।
এমন আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা অজুহাতে জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময়ে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে নিয়মে- অনিয়মে অর্থের বিনিময়ে এ প্রকল্পে নাম অন্তর্ভূক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে তালিকা অন্তর্ভূক্তির নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে।
প্রকল্প পরিচালনার জন্য ওই প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপদেষ্টা, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিম গঠন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কাছ থেকে নেয়া ফরম পূরনের পর তালিকা থেকে বাদ পড়া উপকারভোগী চাকিরপশার ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম, কল্পনা বেগম, ৩নং ওয়ার্ডের রোকসানা বেগম, রতœা রাণী, ৫নং ওয়ার্ডের আছিয়া বেগম, ৬নং ওয়ার্ডের মঞ্জিলা বেগম, উমরমজিদ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ফরিদা পারভিন, ৬নং ওয়ার্ডের লাইজু বেগম, ৪নং ওয়ার্ডের নুরফা বেগম, বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রুবিনা বেগম, লাকী বেগম, নাজিমখান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের শিরিনা বেগম, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ফাতেমা বেগম, ৭ নং ওয়ার্ডের আরিফা বেগমসহ প্রায় ২শতাধিক উপকারভোগী ৮মে বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এসে বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যগণ আমাদের কাছ থেকে ৫ হাজার করে টাকা চেয়েছিল। টাকা দিলে অনলাইন হবে, না দিলে বাদ পড়বে বলে জানিয়েছিলেন। অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবগত হওয়ার পর উপকারভোগীদের সর্তক করে এলাকায় মাইকিং ও ফেসবুকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালোনো হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-সদস্যদের কাছ থেকে ফরম না পেয়ে নিরুপায় হয়ে আমরা ইউএনও স্যারের নিকট আসি এবং তার অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে পুরণ করে স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে জমা দেই। গত ৭মে মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের দেয়া ভ্যানুতে টোকেন নিতে গিয়ে জানতে পারি তালিকায় আমাদের নাম ওঠেনি। তাই ৮মে বুধবার রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
এদিকে উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ারচর গ্রামের নুরআলম বলেন, তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে মেম্বার খালিদকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। একই গ্রামের দিনমজুর মমিনুলের স্ত্রী মোহেনা তালিকায় নাম উঠাতে মাসে প্রতি হাজারে ১’শ টাকা হারে ৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে মেম্বারকে দিয়েছেন। রাজারহাট সদর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড হরিশ্বর তালুক এলাকার মরিয়ম বেগম, মালেকা, শাহিদা বলেন, সুদের উপর টাকা নিয়ে শহিদুল ইসলাম বাবু মেম্বারকে ৫হাজার করে টাকা দিয়েছি তবুও তাদের ভাগ্যে জুটেনি পুষ্টিভাতার কার্ড। এমন অনেক ভুক্তভোগী একই ধরনের অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে আইএসপিপি (যতœ) প্রকল্পের উপজেলা সভাপতি ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহ: রাশেদুল হক প্রধান বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন হতে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।