চট্টগ্রামে রেলওয়ের নানা দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এবার ওই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে কর্মচারী, ঠিকাদার এবং নিয়োগ প্রার্থীদের তথ্য চেয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন । ৩০ এপ্রিল দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাছে এ সংক্রান্ত্র একটি চিঠিও পাঠানো হয়। এতে আগামি ১৫ মে’র মধ্যে চিঠিতে উল্লিখিত তথ্যগুলো সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছেন দুদক চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন। অভিযোগ উঠেছে, রেলের দুর্নীতিবাজ কর্মচারী-কর্মকর্তারা নিজদের রক্ষার জন্য ওপরের মহলে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিয়েছেন।
দুদকের চিঠিতে রেলওয়ের যেসব কর্মচারী ও ঠিকাদারের তথ্য চাওয়া হয়েছে তাঁরা হলেন- প্রধান বাণিজ্যিক দপ্তরের সহকারী দাবী পরিদর্শক ( এসিআই ) মো. অলী উল্লাহ সুমন ( বহিস্কৃত ), তাঁর ভাই ট্রাক সরবরাহকারী অফিসের ইউডিএ আবুল বশর, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের জেনারেটর রুমে কর্মরত পোর্টার খোকন মিয়া, মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম, লাকসামে কর্মরত সমর দে, নিয়োগ প্রার্থী মিজানুর রহমান, ঠিকাদার হাসান, আলমগীর ও ঢাকা বিমানবন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান।
দুদক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিগত ২০১২ সালের রেলের দুর্নীতিসহ কয়েকটি অভিযোগে সুমন ও তার ভাই বশরের নাম উঠে এসেছে। তারা দুই ভাইসহ রেলের একটি সক্রিয় সিন্ডিকেট মিলে খালাসী, আয়া ও টিকেট চেকার পদে ৩০,৪০ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বাকি ৩শ’ জনের অধিক ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১২ কোটি টাকার মতো নিয়েছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। এগুলোসহ সম্প্রতি আরো কয়েকটি অভিযোগও পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের লোকদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলে তারা ওই টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে একাধিক।
পূর্বরেলের প্রধান বাণিজ্যিক দপ্তরের এসিআই মো. অলী উল্লাহ ওরফে সুমনের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেয়া, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অনিয়ম, হুমকি, ধমকি, ব্লাকমেইল করে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগে বাধ্য করা, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আছে। যে কারণে দুদকের পক্ষ থেকে পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করা সুমনের নামে মেন্স স্টোরস লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি, শেয়ার হোল্ডারদের যাবতীয় তথ্য, রেলওয়ে হতে দোকান, বাসা, জায়গা লিজ বরাদ্দ পেয়ে থাকলে তার তথ্য, সুমনের নামে রেলের কোয়ার্টার বরাদ্দ ও তার বর্তমান অবস্থান এবং কতদিন যাবত ওই বাসায় থাকছেন না, তার নামে রেলওয়ের কোনো সম্পত্তি নগরীর আনন্দবাজার নামক স্থানে দখলে আছে কিনা এবং ২০১২ সালে টিকিট কালোবাজারির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলার তথ্য চাওয়া হয়েছে। ওদিকে মিজানুর রহমান নামে একজন নিয়োগ প্রার্থীর বিভিন্ন পদে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও আবেদনের কপি এবং ঢাকা চট্টগ্রাম তূর্ণা নিশীতা ট্রেনের জেনারেটর রুমে কর্মরত পোর্টার খোকন মিয়ার চাকরিতে যোগদান সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য চেয়েছে দুদক কর্তৃপক্ষ।
আবার ২০০৪ সাল হতে বর্তমান পর্যন্ত ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জে কারা যোগদান করেছেন, তাদের যোগদান পত্রের নথি, ২০১২ সালে নিয়োগকৃত মো. তুষার আলম, সরোয়ার আলম, মো. বাদল, রফিকুল আলম ময়মনসিংহ, রাজশাহীসহ অন্য কোনও জায়গায় চৌকিদার, ট্রলিম্যান, খালাসী, ট্রেন নাম্বার ট্রেকার পদে কর্মরত তালিকা থাকলে তাদের নথি, নিয়োগ প্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এবং লাকসাম রেলওয়ের সমর দের ব্যক্তিগত নথি দুদকের কাছে ১২ মের মধ্যে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে রেলের ঠিকাদার হাসান, আলমগীর, ঢাকা বিমানবন্দরের ফাস্টফুড শপের মালিক আকতারুজ্জামান নামীয় কোনও ঠিকাদার রেলওয়েতে তালিকাভুক্তির তথ্য এবং তাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা সরবরাহসহ অতীতে কোনও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল কিনা এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে দুদক।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রেলওয়ের এক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় অলি উল্লাহ সুমনকে সাময়িক বহিস্কার করে কর্তৃপক্ষ। এরপরেও তাঁর দাপট থেকে যায়। এছাড়াও গত ৪ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের মামলা দায়ের করে দুদক। সম্প্রতি আরএনবির সিপাহী পদের নিয়োগ নিয়ে চিফ কমান্ডেন্ট মো. ইকবাল হোসেনের দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সুমনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ আছে। সুমন ও তার ভাই বশরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সঠিক তদন্ত হলে এতে রেলের অনেক রাঘব বোয়ালদের মুখোশ উন্মোচন হবে। দুদক চট্টগ্রামের উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই অভিযোগের আলোকে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানানো যাবে।