চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনে গত কয়েক মাস ধরেই ব্যাপক তোড়জোড় চলছিল। পদ-পদবী পেতে নেতৃবৃন্দরাও ছিল তৎপর। গোপনে একাধিক বৈঠকও হয়েছে নানা জায়গায়। কর্মীরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে থমকে গেছে এমন ধরণের তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হঠাৎ করে ধীরে চলো নীতির কারণে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা পিছিয়ে যায়। তবে আহবায়ক কমিটিতে ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতারা স্থান না পেলে দলের সাংগঠনিক অবস্থা নাজুক থাকবে বলে একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, দক্ষিণ জেলা বিএনপির নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক পদে নাম শোনা যাচ্ছে তিনজনের নাম। এরা হলেন- বর্তমান কমিটির সভাপতি আলহাজ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল। যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের পদে নাম শোনা যাচ্ছে কমপক্ষে ১৫ জনের। এরা হলেন- দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম, সহ-সভাপতি এডভোকেট ইফতেখার হোসেন মহসিন, প্রচার সম্পাদক নাজমুল মোস্তাফা আমিন, আবদুল গাফফার চৌধুরী, এডভোকেট মিজানুল হক, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, আলী আব্বাস, আজিজুল হক চেয়ারম্যান, মোস্তাক আহমেদ খান, আবুল হাশেম রাজু, বদরুল খায়ের, খোরশেদ আলম, মনজুর উদ্দিন চৌধুরী ও এস এম মামুন মিয়া প্রমুখ।
নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনে ইতিপূর্বে একাধিক বৈঠকও করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ছাড়াও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ফলে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে আসতে জেলা নেতাদের অনেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। করতে থাকেন নানা লবিং। কর্মীরাও অনেকটা উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। তবে গুঞ্জন উঠেছে, সাতকানিয়ায় ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত এক বিএনপি নেতাও ওই কমিটিতে আসতে জোর তদবির শুরু করেছেন। তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের নানাভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছেন। তিনি যদি কোনোভাবে নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে আসতে পারেন তাহলে মাঠ পর্যায়ে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে বলে ধারণা করছেন তৃণমুল নেতারা।
একাধিক সূত্র জানায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামে তৃণমূলে বিএনপির দুর্গ গড়ে তোলেন সাবেক মন্ত্রী ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তিনি বিএনপি ছেড়ে এলডিপি গঠনের পর দলের হাল ধরেন জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। পরে তিনি বাঁশখালী আসন থেকে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি মন্ত্রীও হন। পরবর্তীতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বও গ্রহণ করেন। জাফরুল ইসলাম চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদে নেই। তাছাড়া বিগত আন্দোলন-সংগ্রামেও মাঠে ছিলেন তিনি। এ বিষয়টি মাথায় রেখেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাই নতুন কমিটিতে আহ্বায়ক পদে তাঁর সম্ভাবনা থাকবে একটু বেশি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে রয়েছেন আনোয়ারার সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল। এ দুজনকে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। জুয়েলকে নির্বাহী কমিটির পদ দেয়ায় তাঁর আহ্বায়ক পদে থাকা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। তৃণমুল নেতারা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ দলের অবস্থান সক্রিয় করতে অবশ্যই দলের পরীক্ষিত নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা দলকে চাঙ্গা করতে অর্থ ব্যয় করেন তাদেরকে প্রাধাণ্য দিতে হবে।
এর আগে, ২০১০ সালের ২০ মার্চ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। সম্মেলনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তখন দক্ষিণ জেলার এ কমিটি মেনে নিতে পারেনি বিএনপির অপর একটি অংশ। গঠন করা হয় পাল্টা কমিটিও। ওই কমিটিতে আহমদ খলিল খানকে সভাপতি এবং ইফতেখার মহসিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ফলে কমিটি-পাল্টা কমিটির কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা নানা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিধাবিভক্ত দক্ষিণ জেলা বিএনপিকে একত্রিত করতে উদ্যোগ নেয় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। ১৫১ সদস্যের পুনর্গর্ঠিত কমিটিতে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি বহাল রাখা হলেও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন আহমেদকে সরিয়ে গাজী শাহাজাহান জুয়েলকে নতুন সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন আহমদকে একই কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি করা হয়। এরপর থেকেই দক্ষিণ জেলা বিএনপিতে সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়ে।
এদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, বিগত ৫-৬ মাস ধরে জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের তৎপর হয়ে উঠেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কিন্তু হঠাৎ করে তা থমকে গেছে। এ মুহূর্তে দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমও দেশে নেই। ওমরা পালনের জন্য তিনি সৌদি আরবে গেছেন। তাই ঈদের আগে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সম্ভাবনাও নেই।